জমে উঠছে গ্রন্থমেলা : মুক্তিযুদ্ধ ও বিজ্ঞানের বই বিক্রি বেশি

347

ঢাকা, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ (বাসস) : অমর একুশের গ্রন্থমেলা আজ বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে জমে উঠেছে। বিভিন্ন বয়সের মানুষ স্টলে স্টলে বই পছন্দ করতে ভিড় করে। বিক্রিও শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও বিজ্ঞানবিষয়ক বই, রহস্য ও অনুবাদমূলক বই বিক্রি হচ্ছে বেশি।
শিক্ষার্থীদের আগমন সবার আজ দৃষ্টি কেড়েছে। স্কুল-কলেজ ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসছে মেলায়। তারা বইও কিনছে। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অন্য প্রকাশের প্যাভিলিয়নে ছাত্রÑছাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। বই বিক্রির রসিদ লিখে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না বিক্রেতারা। এই স্টল থেকে কিরণ মিয়া বাসসকে জানান, আজ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীরা বই কিনছে। তারা হুমায়ুন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হকসহ বিভিন্ন লেখকের বই কিনছে। তিনি জানান, তাদের স্টলে এ পর্যন্ত ১২টি নতুন বই এসেছে। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের পুরনো বই বিক্রি হচ্ছে বেশি।
অন্যান্যর প্যাভিলিয়নে একই অবস্থা ছিল। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক বাসসকে জানান, খুবই ভাল লাগছে। ছাত্রÑছাত্রীরা অতীতে মেলায় এসেছে মেলার শেষ দিকে। কিন্তু আজকে তো ছাত্রদের ঢল নেমেছে। বইও কিনছে তারা। তিনি জানান, তাদের প্যাভিলিয়নে উপন্যাস, প্রবন্ধ, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে চারদিনে ২১টি নতুন বই এসেছে।
বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়ন থেকে জানান হয়, তাদের বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে বিভিন্ন অভিধান। এর পরই রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামাচা’। একাডেমি এ পর্যন্ত ৭৪টি নতুন বই প্রকাশ করেছে।
আজ মেলায় নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে এবারের মেলায় সর্বোচ্চ ১৪১টি। এ নিয়ে চারদিনে মেলায় নতুন বই প্রকাশিত হলো ৩৫৮টি। মেলায় প্রতিদিনই প্রচুর সংখ্যক বিদেশি সাহিত্য, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বই প্রকাশিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আজ বাসসকে লেখক ও অনুবাদক নূরুল করিম নাসিম বলেন, মেলার ভেতর পাইরেসি বই বিক্রি হচ্ছে।
আজ মেলায় বাংলা একাডেমির পুকুরের উত্তর পাড়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)’এর স্টল ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। স্টল উদ্বোধন শেষে তিনি বাসসকে বলেন, খুই ভাল লাগছে মেলায় এসে। পৃথিবীর অসংখ্য মেলায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই মেলার মতো এতো মানুষ বিশ্বের কোন মেলায় যোগ দেন না। মনে হচ্ছে, আমাদের দেশে পাঠক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও বিজ্ঞানের বই বিক্রি বেশি : মেলায় আজ এসেছে ১৪১ টি বই। গতকাল ১৩৮টি এবং ১ ফেব্রুয়ারি নতুন বই এসেছে ৭ টি।এবারের এ মেলায় অংশ নিয়েছে প্রায় সাত’শ বেশি স্টল। শিশুদের জন্য রয়েছে ৫০ টিরও বেশি স্টল। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মেলার শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজ্ঞানবিষয়ক বই, রহস্য ও অনুবাদমূলক বই এবং শিশুদের বই বিক্রি হচ্ছে বেশি।
এর মধ্যে চর্চা প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ নির্মাণ, শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা হাসুর পৃথিবী, হাসুর দেশ, শেখ হাসিনার দেশে ফেরা, মুক্তি প্রতিক্ষায় শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা ‘এ্যা স্টাটারর্স গাইড’। এই বইগুলো বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত ৭ মার্চের ভাষণের বই ‘সেভেন’থ মার্চ স্পিচ, ভয়েজ অব দি হিস্ট্রি, পাকি রাক্ষস-বাঙালী মুক্তি অন্যতম।
কবি আসলাম সানী বলেন, বই মেলা প্রাণের মেলা। বাঙালি চেতনা আর ঐতিহ্যের মেলা। এ মেলায় নানা বয়সী পাঠকদের পাশাপাশি বিদেশি পাঠকদেরও আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। আগের চেয়ে এবারকার বইমেলার অনেকগুলো ইতিবাচক দিক রয়েছে। এরসঙ্গে নতুন নতুন লেখক যেমন নিজেদের বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সুযোগ পায় তেমনি প্রকাশকরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। টোনাটুনি প্রকাশনের লেখক আনিসুর রহমান বলেন, কিভাবে আরো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশুদের উন্নয়নে কাজ করা যায় তার বিষয়ে কাজ করছি।
রাজধানীর কমলাপুর থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন কলেজ শিক্ষক রাহেলা বেগম। তিনি জানান, প্রতিবছরই বই কিনতে ছেলেমেয়েকে নিয়ে আসি। ওরা বই পড়তে ভালোবাসে। বইয়ের জন্য আলাদা বাজেট রাখা হয়।
আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শবনম মুশতারী রিমঝিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে ভাল লাগে । মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ঐতিহ্য তাই এবারো মুক্তিযুদ্ধের বই ও ভূতের বই কিনেছি।
জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের ধানমন্ডিস্থ দখিন হাওয়ার দক্ষিণ দিকের বারান্দার আদলে সাজানো স্টলটিতে দেখা যায় তার ভক্তদের ভিড়। এছাড়া চর্চা ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই। রাজশাহী থেকে প্রকাশিত চলচ্চিত্রবিষয়ক ষান্মাসিক পত্রিকা ম্যাজিক লণ্ঠন নিয়ে এসেছে হারুন অর রশিদ। চট্টগ্রাম থেকে খড়িমাটির প্রকাশনা থেকে বের হয়েছে আঞ্চলিক ঐতিহ্য নিয়ে লেখা লিটলম্যাগ।
ঝিঙেফুল থেকে বের হয়েছে শিশুতোষ বই। ডাক প্রকাশনী থেকে ব্যতিক্রমধর্মী শিশুতোষ কিছু বই বের হয়েছে ভিন্নধর্মী কিছু বই।ময়ুরপঙ্খী প্রকাশণী থেকে শিশুদেও জন্য চিরায়ত কল্পকাহিনী ও নীতিকথামূলক বই বের হয়েছে। শিশুদের এ ধরনের বই কেনার অঅগ্রহ দেখা গেছে। হলি পাবলিকেশন্স ডিজিটাল পেন বেবি’স টিচার নিয়ে সিরিজ বই বের করেছে। সংস্থার বিক্রয়কর্মী নুরুল হুদা বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এই ধরনের বই বের হচ্ছে। দামের দিক নয়, মানের দিক চিন্তা করে বইটি বেশ কেনা হচ্ছে। বই সেটের সাথে কলম, চার্জার ও ওয়ারেন্টি কার্ড রয়েছে।