এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস-জনিত মৃত্যু কমাতে চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি জোরদারের আহ্বান

1342

ঢাকা, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : ক্লাস রুমের এক কোনায় বসে খুব মনোযোগ দিয়ে একটি কার্টুনের বই পড়ছিল দশ বছর বয়সী সায়মা ইসলাম (ছদ্ম নাম)। একই রুমে আরো পাঁচটি বাচ্চা এক সাথে বসে খেললেও সে দিকে কোন মনোযোগ নেই সায়মার।
কাছে যেতেই শুধু একবার মুখ তুলে দেখল সায়মা। আবার চোখ দিল বইয়ের দিকে। এক পলকেই বুঝা গেল সেই চোখের গভীরতা। মনে হচ্ছিল সে যেন প্রশ্ন করছে- ‘আমার কি দোষ ছিল? আমার কেন এই রোগ হল?’ শ্রেনী শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেল, সায়মার বাবা মধ্য প্রাচ্যের এক দেশে দীর্ঘদিন ছিল। বারো বছর আগে দেশে এসে তিনি বিয়ে করেন। যখন দেশে আসেন তখনই তিনি ছিলেন এইডস রোগী। কিন্তু তিনি কাউকে এ বিষয়ে কিছুই জানাননি। এমনকি তার নিজের পরিবারও এ বিষয়ে কিছুই জানত না। বিয়ের পর প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকতেন তিনি। কিন্তু ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বললে যেতে চাইতেন না।
এভাবেই চলতে থাকে। এরপর তাদের ঘর আলো করে আসে সায়মা। শুরুতে ভালোই ছিল সায়মা। কিন্তু তার প্রচন্ড জ্বর। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে বেশ কিছু টেস্ট দেন তিনি। বিবিধ টেষ্টের পর ধরা পড়ে সায়মার এইচআইভি পজিটিভ। সায়মার মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। অনেক পীড়াপীড়ির পর সায়মার বাবা স্বীকার করেন যে তিনি একজন এইডস রোগী। এরপর থেকে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে চলছে সায়মার জীবন।
‘শিশু, এইচআইভি ও এইডস: ২০৩০ সালের বিশ্ব’ শীর্ষক ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে একটি আশা জাগানিয়া বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে। আর তা হল এইডস এর কারনে শিশু কিশোর-কিশোরীদর মারা যাওয়ার হার ভবিস্যতে কমবে।
এতে বলা হয়, বিশ্বে বর্তমানে এইডস রোগের কারনে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার যা ২০৩০ সালে ৫৫ হাজারে নেমে আসবে। তবে এই কমার হার শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে খুবই ধীরগতির বলেও উল্ল্যেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
মূলত, বাংলাদেশে জনসাধারনের মধ্যে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব কম, শূণ্য দশমিক ১ শতাংশেরও কম। ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় ৮৬৫ জন ব্যক্তি নতুন করে এই এইচআইভি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এর মধ্যে পাঁচ শতাংশের বেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরী, যাদের বয়স ১৮ বছরের কম।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনিসেফের এক জরিপে বলা হয় বিশ্বে ০-১৯ বছর বয়সী এইচআইভির সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছাবে যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এইডসের কারনে ২০১৮ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখের উপরে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হতে পারে। আর এজন্য দরকার এই খাতে আরো বেশি বিনিয়োগ। এইচআইভি প্রতিরোধ,পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে প্রতিদিন প্রায় ৭৬ জন কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হতে পারে।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, জীবনের প্রথম দশবছরে এইচআইভিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেকে নেমে আসবে। তবে নতুন করে আক্রান্ত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা কমবে মাত্র ২৯ শতাংশ।
অন্যদিকে, এইডসের কারনে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার কমতে পারে ৫৭ শতাংশ কমতে পারে এবং ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুর হার কমবে ৩৫ শতাংশ।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০১৬ সালে এইচআইভি ভাইরাসের কারনে একহাজার লোক মারা যায়। তবে এশিয় দেশগুলো মধ্যে একই বছরে ভারতে সর্বোচ্চ প্রায় ৬২ হাজার জন মারা গেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তান (মৃতের সংখ্যা ৫৫০০ জন) এবং নেপালের (মৃতের সংখ্যা ১৭০০ জন) অনেক পেছনে রয়েছে, যা সত্যিই আশা ব্যঞ্জক বলে মনে করছেন বাংলাদেশ এইডস, এসটিডি লাইন পরিচালক অধ্যাপক মো. শামিউল ইসলাম।
তিনি এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস-জনিত মৃত্যু কমানোর লক্ষ্যে কিশোর-কিশোরীদের চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি জোরদার করার আহ্বান জানান।