অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫.৭৮ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ প্রস্তাব

1303

ঢাকা, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইতোমধ্যে ৫ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এসব বিনিয়োগ দিয়ে মূলত স্টিল, বিদ্যুৎ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, গার্মেন্ট এক্সেসরিজ, ইমারত সরাঞ্জম, রং এবং পেট্রো কেমিক্যাল পণ্যের কারখানা গড়ে তোলা হবে।
এই বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিপরীতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে জমি বরাদ্দের ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ভূমিসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করছে।
এ প্রসঙ্গে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বাসসকে বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠান বড় বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এখন বাংলাদেশে আসছে। ইতোমধ্যে বিদেশী ১২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এসব বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি জমি বরাদ্দের ইজারা চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের অনেককেই ভূমিসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে।’
এছাড়া আরো ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পাইপলাইনে রয়েছে বলে তিনি জানান।
পবন চৌধুরী বলেন, ৫ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ দিয়ে যেসব শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হবে, সেখানে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তিনি মনে করেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে বিদেশী বিনিয়োগের এই সূচনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে শিল্পায়ন নতুন যাত্রা শুরু করেছে।
বিদেশী যে ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে এগুলো হলো-জাপানের বিশ্বখ্যাত নিপ্পন স্টিল কোম্পানি, প্রতিষ্ঠানটি ইমারত নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ফেব্রিকেটেড স্টিল উৎপাদনে ৫৯ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। মালয়েশিয়ার ইয়নমেটাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড স্টিল র‌্যাক উৎপাদনে ৯ মিলিয়ন ডলার, চীনের বড় প্রতিষ্ঠান বেইজিং জেনইয়নকনস লিমিটেড ২০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০৪ মিলিয়ন ডলার, চীনের আরেক বড় প্রতিষ্ঠান হ্যাংজো জিনজুন গ্রুপ কোম্পানী লিমিটেড ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের ইউরোশিয়া ফুড প্রোসেজ লিমিটেড খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে ৩০ মিলিয়ন ডলার, সিঙ্গাপুরভিত্তিক এডিবেল ওয়েল লিমিটেড ফুড পার্ক গড়ে তুলতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার, সংযুক্ত আরব-আমিরাতের প্রতিষ্ঠান আরব-বাংলাদেশ ফুড লিমিটেড হিমায়িত খাদ্য শিল্পে ১২ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার, ভারতের শীর্ষস্থানীয় রং প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান পেইন্ট রং উৎপাদন শিল্পে ২৬ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বার্জার পেইন্টস্ স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদনে ১৩ মিলিয়ন ডলার, অস্ট্রেলিয়ার মার্চেন্ট মেলবোর্ন লিমিটেড ৩ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার,অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আস্ট-বাংলা এক্সেসরিজ লিমিটেড গার্মেন্ট এক্সেসরিজ উৎপাদনে ১২ দশমিক ১৫ মিলিয়ন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সুপার পেট্রো কেমিক্যাল লিমিটেড পেট্রো কেমিক্যাল পণ্যের কারখানায় ২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
পবন চৌধুরী বলেন, এইসব প্রতিষ্ঠান মোট ১ হাজার ৮১০ একর জমি ইজারা নিচ্ছে। যার অধিকাংশ মীরসরাই ও মহেশখালীতে। আগামী বছরের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, অনুমোদিত এই বিনিয়োগ প্রস্তাবের বাইরেও অনেক বিশ্বখ্যাত বিদেশী প্রতিষ্ঠান বড় বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে তাদের এই আগ্রহ বাংলাদেশের অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, চীন, জাপান ও ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষায়িত আলাদা অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে।
বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জাপানের নিপ্পন স্টিল এন্ড সুমিতমো মেটাল কোম্পানীর বিনিয়োগ প্রস্তাবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পবন চৌধুরী বলেন, এখন জাপানের অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ আগ্রহ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। জাপানী বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশে আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে, এটা আগে চিন্তা করা যায়নি। জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশের বিদেশী বিনিয়োগের জন্য ‘গেম চেঞ্জারের’ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দেশে শিল্পায়ন, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, উৎপাদন এবং রফতানি বহুমুখীকরণ ও বৃদ্ধির লক্ষে বেজা ২০৩০ সাল নাগাদ দেশব্যাপী ৭৫ হাজার একর জমিতে ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। এর মাধ্যমে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি এবং ৪০ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে।
বেজা এ পর্যন্ত মোট ১৯টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাক-যোগ্যতা সনদ প্রদান করেছে, যার মধ্যে ৭ টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চূড়ান্ত সনদ দেয়া হয়েছে। এ সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে ১৭ টি শিল্প স্থাপন হয়েছে এবং আরো ১৭টি শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ২ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে এবং ২০ হাজার ২৭৬ জনের নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।