রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ প্রিভিউ : ‘ই’

742

ঢাকা, ১ জুন, ২০১৮ (বাসস) : রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু হতে আর বাকি মাত্র দুই সপ্তাহ। এরই মধ্যে ফুটবল ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে আসর শুরুর গ্রুপ পর্ব। কোন দল কোন গ্রুপে পড়েছে এবং কোন গ্রুপ থেকে কোন দলটি নক আউট পর্বে উঠে আসবে, ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। এখানে রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের দল এবং খেলা নিয়ে আলোচনা করা হল।
গ্রুপ ই : ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়া
ব্রাজিল: ২০১৪ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমি-ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল ব্রাজিল। তবে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেলেকাওরা। একক নির্ভরতা কমিয়ে মানসম্পন্ন খেলা দিয়ে ময়দানী লড়াইয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে।
কোচ তিতের অধীনে থাকা দলটি বাছাইপর্ব থেকে সবার আগে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে। বাছাই পর্বে ১৩ ম্যাচের সবকটিতেই জয়লাভ করেছে ব্রাজিল। আর প্রীতি ম্যাচে তিনটিতে ড্র এবং আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একটি মাত্র ম্যাচে পরাজিত হয়েছে।
গত আসরে নেইমারের অনুপস্থিতির কারণে ব্রাজিলকে যেভাবে পরাজিত হতে হয়েছিল, এখন আর সেই অবস্থা নেই। তারা এখন আর একজন খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীল নয়। কারণ গাব্রিয়েল জেসুস, রবার্তো ফিরমিনো এবং ফিলিপ কুটিনহোর মত ব্রাজিলীয় তারকারা এখন সম্মুখভাগে যে কোন রকম আক্রমনে পারদর্শী। শুধু তাই নয়, সেলেকাওদের রক্ষনভাগও এখন বেশ সমৃদ্ধ। যেখানে মান সম্পন্ন গোল রক্ষক ও ডিফেন্ডার রয়েছে।
চার বছর আগে ব্রাজিল হয়তো অহংকারি ছিল। কিন্তু এবার তাদের কিছু প্রমান করার আছে। দলটি গ্রুপ পর্বের বৈতরনী পার হওয়া নয় শিরোপা জয় করারও সম্ভাবনা রয়েছে। স্বভাবাবিক ভাবে শীর্ষস্থান নিয়েই ব্রাজিলের গ্রুপ পর্ব পার হবার সম্ভবনা বেশী।
সুইজারল্যান্ড: ২০০৯ সালে অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপ জয় করেছিল সুইজারল্যান্ড। সেই দলটির জের্ডান শাকিরি এবং গ্রানিট জাকার মত মেধাবী গ্রুপ নিয়েই এবার রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। সাকিরি ও জাকার মত তারকারা নিজেরদের দিনে যে কোন কিছু ঘটানোর দক্ষতা রাখেন।
এছাড়া দলে আছে কিছু উদীয়মান তারকা ফুটবলারও । এদের মধ্যে ব্রিল এমবোলো , এডমিলসন ফার্নান্দেস ও ম্যান্যুয়েল আকানজি উল্লেখযোগ্য। অভিজ্ঞ সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে এরা দারুন ভাবে মানিয়ে খেলতে পারেন। বাছাইপর্বে টানা নয় ম্যাচে জয়লাভ করেছিল সুইজারল্যান্ড। তারপরও বিতর্কিত এক ম্যাচ দিয়ে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে টপকে চুড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে দলটি।
গ্রুপ প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের বিপক্ষে সুইজারল্যান্ড খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয়না। তবে তাদের যে দক্ষতা রয়েছে তাতে কোস্টারিকা ও সার্বিয়াকে ছাড়িয়ে যাবার সম্ভবনা বেশী। সব দিক বিবেচনায় গ্রুপ পর্বে তারা দ্বিতীয় অবস্থান লাভ করতে পারে। শুধু তাই নয়, দলটির নকআউট পর্বে পৌছানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
কোস্টারিকা: ২০১৪ বিশ্বকাপে বিস্ময়কর পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেছে কোস্টারিকা। চার বছর আগে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ওই আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে অখ্যাত দলটি। সেখানে টাইব্রেকারে হল্যান্ডের কাছে হেরে যায় কোস্টারিকা।
লস টিকোর এই দলটির বড় অনুপ্রেরনা হল বিশ্ব সেরা গোল রক্ষক কেইলর নাভাস। তবে রক্ষনভাগের কয়েকজন মুখ্য খেলোয়াড় ‘বুড়ো’ পিড়ীত হওয়ায় তাকে বেশ পরীক্ষা দিতে হবে। যেমন দলের দুই গুরুত্বপুর্ন রায়ান রুইজের বয়স হয়ে গেছে ৩২, ক্রিস্টিয়ান বোলানোর ৩৪ বছর।
গত আসরের দলে ব্যাপক পরিবর্তন এনে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপ স্কোয়াড গঠন করেছে কোস্টারিকা।পরিবর্তন ঘটেছে খেলার পদ্ধতিতেও। তথাপি দলটি দলটি খুব শক্তিশালী বলা যাবেনা। তারা যে হোম ওয়ার্ক করেছে তাতে ইতালী, উরুগুয়ে ও ইংল্যান্ডের মত ভাল অবস্থানেও নেই। যে কারণে গ্রুপের তলানীতে অর্থাৎ চতুর্থ স্থান নিয়েই শেষ হতে পারে কোস্টারিকার বিশ্বকাপ মিশন।
সার্বিয়া: আট বছর পর বাছাইপর্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে সার্বিয়া। ২০০৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত বিশ্বকাপ আসরে খেলতে যাচ্ছে তারা।
দলের বয়স্ক রক্ষনভাগ নিয়ে কিছুটা অভিযোগ রয়েছে। তবে ময়দানী লড়াইয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষনভাগ ভাঙ্গার দারুন সব কলাকৌশল ও সৃস্টিশীলতা রয়েছে তাদের। ধারের খেলোয়াড় হিসেবে ফুলহ্যামে যোগ দিয়েই সবার নজড় কেড়েছেন আলেক্সান্দার মিত্রোভিচ। দুই মিডফিল্ডার নেমেনজা ম্যাটিচ ও দুসান টেডিচও যথেষ্ঠ দক্ষ।
তবে শীর্ষ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা নেই কোচ ম্লাডেন ক্রাস্টাজিচের। বিশ্বকাপে ই গ্রুপ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সার্বিয়া আগামী ১৭ জুন সামারায় কোস্টারিকার মোকাবেলা করবে। আর ওই ম্যাচটিই হবে যে কোন পর্যায়ে প্রধান কোচ হিসেবে তার প্রথম প্রতিযোগিতামুলক ম্যাচ।
সার্বিয়া দলটি বেশ লড়াকু মেজাজের। তবে ব্রাজিল বা সুইজারল্যান্ডের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যে কারণে গ্রুপের শীর্ষ দুইয়ে তাদের কোনভাবেই বিবেচনা করা যাচ্ছেনা। গ্রুপের তৃতীয় স্থান নিয়েই হয়তো এবারের আসর শেষ করবে সার্বিয়া ।