টাঙ্গাইলে বাণিজ্যিকভাবে চিরতা চাষের সম্ভাবনা

481

টাঙ্গাইল, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : জেলার মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চিরতা চাষের সম্ভবনা রয়েছে। লাভজনক হওয়ায় অনেকে স্থানীয়ভাবে চিরতা নামে সমধিক পরিচিত কালোমেঘ চাষ করছে ইউনানি আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও এখন ঘাটাইলের কালোমেঘ ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বণিজ্যিকভাবে চিরতা চাষে উৎসাহিত হবে চাষিরা। আবহাওয়াগত আনুকূল্যে বাংলাদেশের সর্বত্র কালোমেঘ বা চিরতা জন্মে। কালোমেঘ অঞ্চলভেদে কল্পনাথ হিসেবেও পরিচিত। অনেকে অত্যধিক তেতো স্বাদের এ গাছ শুকিয়ে চিরতা বলে বিক্রি করে থাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, কালোমেঘ জ্বর থেকে শুরু করে অজীন, যকৃতের গোলযোগসহ অনেক জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। কালোমেঘের বৈজ্ঞানিক নাম এন্ড্রোগ্রাফিস প্যানিকুলাটা। কালোমেঘ গাছ আধামিটার থেকে এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কান্ড শাখা-প্রশাখা চারকোণাকৃতি, নরম ও সবুজ। মরিচ পাতার সদৃশ কালোমেঘ পাতার অগ্রভাগ ও বোঁটার দিকে ক্রমশ সরু এবং বর্ণ গাঢ় সবুজ।
জানা যায়, এ এলাকায় কালোমেঘ চাষের অগ্রপথিক গৌরিশ্বর গ্রামের ক্ষুদ্র ভেষজ ব্যবসায়ী ওয়াহেদ আলী। তিনি আশির দশকে সর্বপ্রথম যশোর থেকে সামান্য পরিমাণে বীজ এনে বাড়ির পাশে ছিটিয়ে রাখেন। ভালো ফলন হলে বিষয়টি অন্যদের নজরে আসে। তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে অন্যরাও এর চাষ শুরু করেন। কালোমেঘ চাষে আলাদা কোনো যতœ নেয়ার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে বীজ ছিটিয়ে রাখলেই চলে। তেমন কোনো রোগ বালাইও হয় না। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টিতে কোনো সমস্যা হয় না। সাথী ফসল হিসেবে কোনো রকম খরচ ছাড়াই প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ২০ মণ কালোমেঘ উৎপাদন করা হয়। যার বাজারমূল্য মণপ্রতি চার হাজার টাকা। ভরা মৌসুমে এ মূল্য দাঁড়ায় ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ।
গৌরিশ্বর গ্রামের চাষি হুরমুজ আলী জানান, সাধারণত বৈশাখ মাসে এ বীজ বপন করা হয়। পরিপক্ব হয় কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। ঘাটাইলের গৌরিশ্বর ও কুশারিয়া, নলমা, গারোবাজার, ফটিয়ামারী, সাগরদিঘীসহ বিভিন্ন গ্রামে কালোমেঘের চাষ বেশি হয় বলে জানান। গৌরিশ্বর গ্রামের হায়দার আলী, মজিবর রহমানসহ আরও অনেকেই এ চিরতা বা কালোমেঘের আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের ফটিয়ামারী গ্রামের কৃষক আহম্মদ আলী জানান, তিনি এ বছর ২.২০ একর জমিতে কালোমেঘের চাষ করেছেন। আর এতে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো পাওয়ার আশা তার। তিনি প্রায় ৫/৬ লাখ টাকার কালোমেঘ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। নতুন চাষি গোলাপ হোসেন এবার বেগুন ও কলা চাষ বাদ দিয়ে এ বছর কালো মেঘ চাষ শুরু করেছেন। তিনি ৩.৩০ একর জমিতে কালোমেঘের চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকা। আর বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন প্রায় ৮/১০ লাখ টাকা। কালোমেঘের পাইকারী ব্যবসায়ী গৌরিশ্বর গ্রামের মিন্টু শিকদার জানান, তিনি চাষিদের কাছ থেকে কালোমেঘ সংগ্রহ করে মাহজনদের কাছে বিক্রি করেন। ঢাকা, চট্রগ্রাম, বগুড়া থেকে মহাজনরা ঘাটাইল এসে এগুলো ক্রয় করে নিয়ে যায়। কালোমেঘ ভেষজ ঔষধ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তিনি গত বছর ১৭ টন কালোমেঘ বিক্রি করেছেন। লাভও পেয়েছেন ভালো।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কালোমেঘ ওষধি গুণে ভরা ভেষজ গাছ। উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকার চাষিরা কিছু কিছু জমিতে কালোমেঘ চাষ করে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কালোমেঘ চাষ একটি ভাল উদ্যোগ। এ ব্যাপারে চাষিরা উৎসাহী হলে তাদের সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।