মা-শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য

575

॥ মাহবুব আলম ॥
ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : তৃণমূল থেকে শহরাঞ্চল দেশের সর্বত্রই মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। সন্তান জন্মদানের সময়ও এর পরবর্তীতে মায়েদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৫ অর্জনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুস্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। সুস্থ জনগণ ছাড়া সুস্থ জাতি আশা করা যায় না। কেবল সুস্থ-সবল জাতিই পারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এই লক্ষ্যে সরকার জনসাধারণ বিশেষ করে, মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তখনই নিরাপদ প্রসূতি স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। যার সুফল ভোগ করছে দেশবাসী।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, স্বাস্থ্যখাতে সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা, পদক্ষেপ ও উদ্যোগের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। নতুন হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের যুগোপযোগী ও উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসবের হার ১৮ শতাংশ থেকে ৩১.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
জন্মহার হ্রাস, নারী শিক্ষা, বিবাহের বয়স বৃদ্ধি, জরুরি প্রসূতি সেবা কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশে মাতৃমৃত্যু হার কমেছে। মাতৃমৃত্যু প্রতি লাখে প্রায় ১৫০ জনে নেমেছে। এ সংখ্যা শূন্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা গবেষক ডা. নাজনীন আক্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। তবে এখনও দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়। এ সব বিষয় মাথায় রেখে এ সংক্রান্ত কর্মসূচিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
কমেছে শিশু মৃত্যুর হার :
শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের সু-স্বাস্থ্যকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে সরকার শিশু মৃত্যু হার হ্রাস করার মাধ্যমে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪ অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বিশ্বে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০০৯ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল, এমনকি বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
এদিকে দেশকে পোলিওমুক্ত করতে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচির উদ্যোগ নেয় সরকার। এতে শিশুমৃত্যু হার কমেছে। পোলিওমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা :
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আজ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। গ্রামের মানুষ এখন নিজেদের দোরগোড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকেই পাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
সূত্র জানায়, গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরই উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ওই সময় থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে। ‘শেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’ স্লোগানে কাজ করা এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে মা ও শিশুস্বাস্থ্যে রীতিমতো বিপ্লব ঘটানো হয়েছে।
কমিউনিটি বেস হেলথ ক্লিনিকের (সিবিএইচসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. আবুল হাসেম খান জানান, এসব ক্লিনিকের কাজের পরিধি বাড়ছে। এখন প্রায় ১ হাজার ২০০ ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে, প্রতিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগ এখান থেকে শনাক্ত করা হচ্ছ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের ফলে বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। পাশাপাশি পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও মেধাবী চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেছে।
নেত্রকোণা মেডিকেল কলেজ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও নীলফামারী মেডিকেল কলেজে এ বছর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগের মেডিকেল কলেজগুলোর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
এছাড়া দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেলা হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ১০টি নৌ অ্যাম্বুলেন্সসহ ২৬৭টি অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়েছে।
নতুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হোসেন বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য এসেছে আমাদের, যা বেশ প্রশংসার দাবিদার। ভবিষ্যতে একটি সুস্থ-সবল জাতি গড়ে তুলে দেশকে বিশ্বের কাতারে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে বর্তমান সরকার কাজ করছে।’