কুড়িগ্রামে মরিচের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

461

কুড়িগ্রাম, ২১ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : জেলার ফুলবাড়ীতে এ বছর মরিচের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক-কৃষাণীর মুখে হাসির ঝিলিক। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এ বছর কোন জমি আর পতিত নেই। জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজের সমাহার। উপজেলার গজেরকুটি, বালাহাট, নাওডাঙ্গা, গোরকমন্ডপ, চরগোড়কমন্ডল, বালাটারী, কুরুষাফেরুষাসহ শত শত একর জমিতে ব্যাপক হারে মরিচের চাষ করেছে কৃষক। বর্তমানে চাষিরা কেউ ঘরে বসে নেই। কেউ মরিচ ক্ষেত পরিচর্যার কাজ করছে, কেউ ক্ষেতের মরিচ তুলছেন। আবার কেউ কেউ মরিচ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলন দেখা দিয়েছে। মরিচ চাষিরা আগাম মরিচ চাষ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা। গত বছরের চেয়ে এ বছর মরিচের বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিরা লাভবান হয়েছেন। সেই সাথে পাইকারী ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে বিঘা বিঘা মরিচ ক্ষেত কিনে তারাও লাভবান হয়েছে । মরিচ পাইকাররা কৃষকের কাছ থেকে প্রতি বিঘা মরিচ ক্ষেত ৩০-৪০ হাজার ক্রয় করে। তারাও মরিচ তোলা শ্রমিক অটোরিকশা ও ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরণের খরচ মিটিয়ে বিঘা প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা আয় করেন।
স্থানীয় কৃষক ও পাইকাররা ক্ষেতের মরিচ ট্রাক-অটোরিকশা ও ভ্যান যোগে কুড়িগ্রাম জেলা শহর, উলিপুর ও লালমনিরহাট শহর, বড়বাড়ী বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে ৮০০-১০০০ টাকা দরে মরিচের মণ বিক্রি করছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের মরিচ চাষি আবেদ আলী জানান, তিনি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা মরিচ চাষ করতে ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি প্রতি বিঘা মরিচ ক্ষেত বিক্রি করেছে ৩৫- ৪০ হাজার টাকা।
কৃষক তাহের আলী, রেজুদুল ইসলাম, ফারুক, দেলদার মুন্সী ও মনু মিয় জানান, তারা প্রত্যেকেই তিন থেকে চার বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এ বছর মরিচের তেমন কোন রোগ হয়নি। ফলনও গত বছরের চেয়ে ভালই হয়েছে। এবছর মরিচের দামও ভাল পেয়েছি। ৩৫-৪০ হাজার টাকা করে প্রতি বিঘা মরিচ বিক্রি করেছেন। মরিচ ভাল ফলন হলে বিঘা প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ মণ করে ফল হবে।
এ ব্যাপারে মরিচের পাইকার আবুল কাসেম ও আব্দুল জলিল জানান, তারা দুইজন মিলে এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে ২০ বিঘা জমির মরিচ ক্ষেত প্রায় ৮ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। এ যাবদ ৫ লাখ কাটার মরিচ বিক্রি করেছেন। প্রতিদিনেই ক্ষেতের মরিচ ২০ থেকে ২৫ জন নারী শ্রমিক দিয়ে তোলা হচ্ছে। তারা আরও জানান, মরিচের বাম্পার ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় কৃষকরা যেমন লাভবান হয়েছে তারাও লাভবান হবার আশা করছেন। প্রতি বিঘায় খরচ মিটিয়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হবে। বাজার দর বাড়লে দ্বিগুণ লাভের সম্ভাবনাও আছে।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ বলেন, ‘এ বছর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষাবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছে । আমরা প্রতিটি কৃষকদের সার.বীজসহ বিভিন্ন ধরণে সহায়তা করেছি। বেশি করে মরিচ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় এ বছর যতেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’