সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা

493

সাতক্ষীরা, ২০ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উপকূলবর্তী বৃহত্তর খুলনার তিন জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ৫ হাজার স্থানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। টিনের চাল ও ভবনের ছাদ বেয়ে পড়া বৃষ্টির পানি বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে উপকূলের মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর। পাশাপাশি খরাপ্রবণ এলাকা সংরক্ষিত পানি থেকে রয়েছে সেচের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও। এতে বৃহত্তর খুলনার দুই লাখ প্রান্তিক মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
খুলনা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী এসএম ইসমাইল হোসেন জানান, ২০০৯ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতের পর বৃহত্তর খুলনার উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ পানির ভয়াবহ সংকট দেখা যায়। এসময় ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প হাতে নেয়। গভীর নলকূপ, উৎপাদক নলকূপ, পাইপলাইন স্থাপন, পিএসএফ ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এ প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত। তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের দুই বছর ইতোমধ্যে পেরিয়েছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা ও সাতক্ষীরা সদর থানা, বাগেরহাট জেলার রামপাল, মংলা, মোড়লগঞ্জ, শরণখোলা, চিতলমারি ও কচুয়া থানায় ৫ হাজার স্থানে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প। এতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় এলাকার ২ লাখ মানুষ সুফল পাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে প্রচুর ক্ষতি হয় জেলার মানুষের। এতে দেখা দেয় পানির ভয়াবহ সংকট। এসময় সাতক্ষীরা পৌরসভা, শ্যামনগর ও আশাশুনিতে কয়েকটি এনজিও এগিয়ে আসে নিরাপদ পানি সরবরাহে। পরবর্তীতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাড়ি বাড়ি পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থার পাশাপাশি পাইপলাইন স্থাপনের কাজে এগিয়ে আসে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা, হাঁড়িভাঙ্গা, কমলাপুরসহ বারোটি গ্রামে পানি সরবরাহের জন্য ১৪ কিমি পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। তিন জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে ৬৬৪ টি গভীর নলকূপ, ১৫০টি পিএসএফ ও উৎপাদক নলকূপ স্থাপন করার কাজ খুব দ্রুত শেষ হবে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের বুড়োখাআটি গ্রামের আব্দুল হাই (৬৫) বললেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প আমাদের এলাকার মানুষের যথেষ্ট উপকার করছে। লবণাক্ত পানি পানের অযোগ্য। তাই গ্রামবাসী পুকুর খুঁড়ে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ শুরু করলেও তা সফল হয়নি। সরকারি উদ্যোগের ফলে এ কাজ হয়েছে সহজ এবং সফল।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার খুঁটিকাটা গ্রামের কৃষক হরিপদ মন্ডল (৬৩) জানান, সরকারের এ ধরণের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সুপেয় পানির জন্য আমাদের যে কয়েক গ্রাম হেঁটে যেতে হতো তা খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। নলকূপ এবং পাইপলাইন স্থাপনে ভোগান্তি কমেছে স্থানীয় কৃষকের। চাষকাজে ব্যবহৃত পানির সংকট খানিকটা হলেও মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে।