ভারতে কট্টরপন্থীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মন্দিরে প্রবেশ করা দুই নারী

209

কেরালা (ভারত), ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস ডেস্ক) : ভারতের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশের পর থেকে বিন্দু আম্মিনি ও কনকদুর্গা কট্টরপন্থীদের ভয়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কয়েক প্রজন্ম ধরে ওই মন্দিরে প্রায় সকল নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
গত ২ জানুয়ারি কালো লম্বা ঢিলা পোশাক পরা ওই দুই নারী অবরোধ এড়িয়ে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেন। এই ঘটনায় ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়।
কট্টরপন্থী হিন্দুরা তাদের ওপর হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। এই হুমকির কারণে তারা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
কট্টরপন্থী হিন্দুদের ভয়ে এরই মধ্যে তাদেরকে ১০টির বেশি স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। বিভিন্ন বাড়িতে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন।
একটি গোপন স্থান থেকে দেয়া সাক্ষাতকারে তারা বলেন, কিছুদিন পরই তাদের প্রকাশ্যে বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে তারা আশা করছেন।
তাদের এই কাজের জন্য তারা মোটেই অনুতপ্ত নন। বরং সাহসিকতার জন্য নারী সংগঠনগুলোর কাছে তারা বীরে পরিণত হয়েছেন। তবে কট্টরপন্থী হিন্দুদের ঘৃণার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
সরকারি কর্মী কনকদুর্গা (৩৯)বলেন, ‘আমি শুধু আমার প্রার্থনা করার অধিকার চাই।’
তিনি বলেন, ‘এটা লিঙ্গ সমতার পথে আরো একটি ধাপ।’
এই দুই নারী বলেন, তারা পরদিন সকালে ১১তম সেফহাউসের জন্য তাদের সর্বশেষ অবস্থান ত্যাগ করবেন।
শবরীমালা মন্দিরটি এখন ভারতীয় নারীদের জন্য সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ের নতুন তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
বিন্দু ও কনকদুর্গা বলেন, শুধুমাত্র চরমপন্থী হিন্দুরাই তাদের ক্ষতি করতে চায় বলে তাদের বিশ্বাস।
তারা আরো বলেন,শবরীমালা মন্দিরে সাধারণ প্রার্থনাকারীরা তাদের হয়রানি করেন নি।
আইনের অধ্যাপক বিন্দু (৪০) বলেন, ‘প্রকৃত প্রার্থনাকারীরা আমাদের জন্য কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেননি। আমরা পাহাড়ে উঠার সময় বিশ্রাম নিতে কয়েকটি জায়গায় থেমেছি। সবাই আমাদেরকে তাদের একজন মনে করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘অল্প কিছু মানুষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সব সময় আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।’
উল্লেখ্য, ঋতুমতী যে কোন নারীর জন্যে এই মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সকল নারীর জন্যে তা উন্মুক্ত করার পক্ষে রুল জারি করে।
প্রতি বছর ৫০ লাখ লোক পাহাড়ের চূড়ার ওই মন্দিরে যান।
এরপর বিপুল সংখ্যক নারীর সঙ্গে তারা দুজনও শবরীমালা মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। কিন্তু হাজার হাজার কট্ট্রপন্থী হিন্দু তাদের বাধা দেয়।
কনকদুর্গা বলেন, কর্তৃপক্ষ আগে থেকে এটা জানত না যে তারা ২ জানুয়ারি মন্দিরে প্রবেশ করবেন। পুলিশ অন্যান্য পুন্যার্থীদের জন্য যা করা উচিত আমাদের জন্যও তাই করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যেন নিরাপদে মন্দির থেকে বের হতে পারি পুলিশ তা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু তারপর আমরা আর তাদের সাহায্য চাইনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমরা দুজনেই আশা করছি যে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব।’
এই সাহসী পদক্ষেপ তাদের পরিবারকেও ক্ষুব্ধ করেছে।
বিন্দু বলেন, ‘আমার মা ছাড়া পরিবারের সবাই আমাকে সমর্থন করেছেন। আমার মা মনে করেন আমি ঐতিহ্য ভেঙ্গেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমি জানি আমার মা আমার জন্য উদ্বিগ্ন। আমি তার ভিন্ন মতকে শ্রদ্ধা করি।’
কনকদুর্গা আগে থেকেই তার পরিবারের সদস্যদের কিছু জানাননি।
তিনি বলেন, ‘যদি আমি আগে থেকেই তাদেরকে শবরীমালায় যাওয়ার কথা বলতাম, তবে আমি নিশ্চিত তারা আমাকে ঠেকাতে সবকিছু করতেন। তাই আমি তাদেরকে এ ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানাইনি। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। তবে আমি মনে করি এটা সাময়িক।’
তিনি আরো বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষ আমার সাথে আছেন আর এটা আমাকে সাহস যোগাচ্ছে।’
ওই দুই নারী শবরীমালায় প্রবেশের কয়েকঘন্টা পর কেরালায় সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সহ¯্রাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়।