রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ প্রিভিউ ‘এ’ গ্রুপ

298

ঢাকা, ৩০ মে, ২০১৮ (বাসস): রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকী। এরই মধ্যে ফুটবল ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে আসর শুরুর গ্রুপ পর্ব। কোন দল কোন গ্রুপে পড়েছে এবং কোন গ্রুপ থেকে কোন দলটি নক আউট পর্বে উঠে আসবে ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের দল এবং ম্যাচ পর্যালোচনা।

গ্রুপ এ : রাশিয়া, সৌদি আরব, মিশর ও উরুগুয়ে
রাশিয়া: ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বকাপে স্বাগতিক দল ভাল খেললেও, এবার পারফর্মেন্সের দিক থেকে রাশিয়া দলের আত্মবিশ্বাস খুবই সীমিত। ২০০৮ সালের ইউরোর সেমি-ফাইনালে খেলা দলটিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান দলটি ফিফা র‌্যাংিকিংয়ে নেমে গেছে ৬৬তম অবস্থানে। যেটি তাদের জন্য এ পর্যন্ত সর্বনিন্ম অবস্থান। ১০ বছর আগের ইউরো আসরের পর এ পর্যন্ত আর কোন আন্তর্জাতিক আসরে তারা গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করতে পারেনি।
ইউরো ২০১৬ এর পর কোচ স্তানিস্লাভ চেরচেসভের অধীনে থাকা দলটির ফলাফলকে কোনভাবেই ইতিবাচক বলা যাবেনা। তার অধীনে দলটি ৫ ম্যাচে জয় ও ৫টিতে ড্রয়ের বিপরীতে হেরেছে আট ম্যাচে। মাঠের বাইরেও দলটিতে অনেক সমস্যা বিরাজ করছে। খেলোয়াড় ও কোচের মধ্যে বিভেদ রয়েছে বলেও প্রচার আছে। আর দুই বছর আগে ফ্রান্স ইউরোতে রুশ দাঙ্গাবাজদের কার্যক্রম সম্পর্কে সবাই নিশ্চিয় অবগত।
এবারের আসরের ড্রয়ে রাশিয়া যে গ্রুপে পড়েছে সেটিকে খুব বেশী কঠিন বলার সুযোগ নেই। অতীতে স্বাগতিক দলকে আরো বেশী শক্তিশালী গ্রুপে থেকে লড়াই শুরু করতে হয়েছে। এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা তাদের জন্য খুব একটা কঠিন হবেনা। গ্রুপ পর্বে ২য় স্থান নিশ্চিত করে রুশদের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার সম্ভাবনা বেশী।

সৌদি আরব: বাছাইপর্বে বেশ কঠিন গ্রুপের বাঁধা অতিক্রম করে এসেছে সৌদি আরব। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন জাপানের চেয়ে এক পয়েন্ট কম নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সমান পয়েন্ট পাওয়া দলটি গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গ্রুপের দ্বিতীয় অবস্থান নিশ্চিত করে।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে বিশ্ব ব্যাপী বেশী পরিচিতি পায় মধ্য প্রাচ্যের দেশটি। ওই আসরে দ্বিতীয় পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় সৌদি আরব। গ্রুপ পর্বে হল্যান্ড ও বেলজিয়ামের সঙ্গে ড্র করে তারা। সাঈদ আল ওয়াইরিয়ানের দেয়া গোলটি আসরের সেরা গোলের তালিকায় জায়গা করে নেয়।
এরপর ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৬ সালে আরো তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছে সৌদি আরব। তবে পার হতে পারেনি গ্রুপ পর্ব। দক্ষিন আফ্রিকা ও ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত পরবর্তী দুই বিশ্বকাপে অবশ্য অংশগ্রহনই করতে পারেনি তারা। এবারের আসরেও তারা গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করতে না পারার সম্ভাবনা বেশী। বড় জোর একটি ম্যাচে ড্র করতে পারে। সে হিসেবে গ্রুপের তলানীতেই স্থান হতে পারে সৌদি আরবের।

মিশর: বিশ্বকাপে ফেরার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে মিশরকে। রেকর্ড সংখ্যক ৭বার আফ্রিকা অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন এই দলকে ১৯৯০ সালের পর আর দেখা যায়নি। বিশ্বকাপের বাকী আসর তাদের দেখতে হয়েছে সাইডলাইনে থেকে। ২০১২ ও ২০১৫ সালের আফ্রিকা নেশন্স কাপেও ব্যর্থ হয়েছে ফারাওরা। অবশ্য গত আসরের ফাইনালে খেলেছে মিশর। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ফুটবলের সর্ববৃহৎ আসরে পৌঁছে গেছে নীল নদের দেশটি। ভবিষ্যতের ব্যালন ডিঅঁর খেতাব জয়ের সম্ভাবনায় থাকা লিভারপুলের স্ট্রাইকার মোহাম্মদ সালাহ দলকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রেখেছেন। তবে সদ্য শেষ হওয়া উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফাইনালে ঘাড়ের ইনজুরিতে পড়েছেন দলের আশা ভরসার প্রতীক সালাহ। গোটা দেশ তথা বিশ্ব চেয়ে আছে তার সুস্থতা ফিরে পাওয়ার দিকে।
তবে এই দলটি তাদের গ্রুপ প্রতিপক্ষ উরুগুয়ের বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয়না। স্বাগতিক রাশিয়ার সঙ্গে তাদের হতে পারে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ওই লড়াইয়েও স্বাগতিকদের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশী থাকবে।

উরুগুয়ে: দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্বে শুধুমাত্র ব্রাজিল ছিল পারফর্মেন্সের দিক থেকে উরুগুয়ের চেয়ে এগিয়ে। দলে থাকা বেশ কিছু বিশ্বমানের তারকা নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ অবস্থানটি অর্জন করতে চায় উরুগুয়ে।
দিয়াগো গুডিনের বয়স ৩১ এবং এডিনসন কাভানি ও লুইস সুয়ারেজের বয়স ৩০ বছর হলেও তারা এখনো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তারকাদের আসনে রয়েছেন। দুটি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর আর এর ধারে কাছে যেতে পারেনি উরুগুয়ে। সর্বশেষ ২০১০ সালের বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনাল খেলেছিল তারা। এর পুনরাবৃত্তিও আর ঘটাতে পারেনি উরুগুয়ে।
দলটির আরো কিছু তরুন মেধাবী খেলোয়াড় বিশ্ব র‌্যাকিংয়ে এগিয়ে আসছে। এদের মধ্যে আছেন টিনএজ ফেড্রিকো ভালভার্দে এবং ২১ বছর বয়সি নাহিতান ন্যান্ডেজ। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপগামী উরুগুয়ের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন অস্কার তাবারেজ। সব মিলিয়ে চারটি বিশ্বকাপ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
গ্রুপ পর্বে প্রথম স্থান অর্জনের জন্য যতটুকু দরকার এর বেশী যোগ্যতা রয়েছে উরুগুয়ের। গ্রুপভুক্ত সৌদি আরব ও মিশরের তুলনায় তারা অনেক বেশী এগিয়ে। স্বাগতিক দর্শকদের ¯্রােতের বিপরীতে গিয়ে তারা বড়জোর ড্র করতে পারে রাশিয়ার সঙ্গে।