বরগুনা মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধির পাশাপাশি ডিম, দুধ মাংস উৎপাদনেও এগিয়ে যাচ্ছে

298

বরগুনা, ১১ জানুয়ারি ২০১৯ (বাসস) : উপকূলীয় জেলা বরগুনা মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধির পাশাপাশি দুধ, ডিম মাংস উৎপাদনেও অনেকটাই এগিয়ে আছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ি এ জেলায় বর্তমানে গরুর সংখ্যা ৬৪৮৯৯২টি, মহিষ ৫০৯৭১টি, ছাগল ১৬৩৮৩২টি, ভেড়া ৭৪৫৪টি, শুকর-৭৫১টি, ঘোড়া-২০৪টি, দেশীয় মোরগ-মুরগি-২১৪২৯৪১টি, লেয়ার মুরগি-৩৩১৯০টি, ব্রয়লার ২৪৮৪৬৮টি, সোনালী মুরগি ৬৬০৫০টি, হাঁস-৮৮৪৭৩৬টি, কবুতর-৫২০৬৩৮টি, কোয়েল-১৫৫৮০টি, টার্কি-১৮৫০টি।
স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট-এইচআরডি’র জরিপের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, বরগুনায় ১৯৯৭-৯৮ সালে মহিষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ হাজার। সিড়র, আইলার তান্ডবের পর এ সংখ্যা হঠাৎ করে হ্রাস পায়। সে সময়ে মহিষের সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ছিল ২৫ হাজার ১ শ ৮০টিতে। বর্তমানে মহিষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫১ হাজারের পৌঁছেছে।
বরগুনা জেলার মধ্যে আমতলী ও তালতলী উপজেলা এমনিতেই পশু সম্পদে সম্মৃদ্ধ। বিস্তীর্ন মাঠ ও জলাভূমিসহ বিভিন্ন চর এলাকায় গরু ও মহিষের আধিক্য দেখা যায়। ‘আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি গ্রামেই গরু ছাগলের সাথেসাথে সমান সংখ্যক মহিষ পালন করা হতো। আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আ. কাদের হাওলাদার জানান, চাষাবাদের পাশাপাশি দুধের প্রয়োজন মেটাতে আমরা মহিষ প্রতিপালন করতাম। মহিষের দুধ খুব ঘন। এটা দিয়ে মাখন ও ঘি তৈরী করা হতো। তাদের বাড়ীতে এখনো ঐতিহ্য হিসেবে মহিষ প্রতিপিালিত হচ্ছে।
তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়ার তাহের গাজী জানান, তিন ধরনের মহিষ পালন করা হয় এ অঞ্চলে। বাদাম (স্ত্রী জাত) এবং চেলা (ভ্যাসেকটমি করানো) মহিষ দিয়ে প্রধানতঃ চাষাবাদ করা হতো আর বলি বা বিচ্ছু (বলদ) রাখা হতো প্রজনন ও মহিষের লড়াই প্রতিযোগিতার জন্য। বাদাম মহিষ চাষাবাদের পাশাপাশি দুধের চাহিদা মেটায়। বরগুনার তালতলী থানার চরপাড়া গ্রামের জালাল মৃধা (৭০)জানান,এখনো জমি চাষ দেয়া, ধান মলন (মাড়াই) সব কাজেই মইষ (মহিষ) ও গরু ব্যবহার করি।
বরগুনা জেলার প্রাণি স¤পদ বিভাগীয় তথ্যমতে জেলায় জেলা প্রাণিস¤পদ দপ্তর, জেলা প্রাণি হাসপাতাল, ০৬ টি উপজেলা প্রাণি স¤পদ দপ্তর, ০৬ টি কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ও ১৯ টি কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট প্রাণি সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এ জেলায় সরকারী তালিকাভূক্ত ৬৮৭ টি হাঁস-মুরগীর খামার, ২৭০টি ডেইরি এবং ৩১০টি ছাগলের খামার রয়েছে। তবে এ তালিকার বাইরেও ৪ শতাধিক পোলট্রি, ৬০টির বেশি ডেইরি ও ৪০টির মতো ছাগলের খামার রয়েছে। জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ি বরগুনায় চাহিদার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে দুধ উৎপাদন হচ্ছে ৮৪%, মাংস ১০৪%, ডিম ৭১%।
জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুল ইসলাম তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন, বরগুনা জেলায় ৯৭০০০ মে.টন দুধ উৎপাদন, ৭৫০০০ মে.টন মাংস উৎপাদন এবং ১৩৮০০০০০০ টি ডিম উৎপাদন করে দুধ, মাংস ও ডিমে এ জেলাকে স্বয়ংস¤পূর্ন করার লক্ষ্যে কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ-১২৫০০টি, শংকর জাতের বাচ্চা উৎপাদন-৪৫০০টি,গবাদি পশুর টিকা প্রদান -১৪২০০০ মাত্রা, হাঁস-মুরগির টিকা প্রদান-৩০০০০০০ মাত্রা, গবাদি পশুর ও হাঁস-মুরগির চিকিৎসা প্রদান-১২৮০০০টি, হাঁস-মুরগির চিকিৎসা প্রদান-৯৯৯০০০টি, রোগ অনুসন্ধানে নমুনা সংগ্রহ ও গবেষণাগারে প্রেরণ -৪৫০০ টি, গবাগি পশু ও পাখির ডিজিজ সার্ভিলেন্স-৭০টি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামারীর দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ-১৫০০টি, উঠোন বৈঠকের আয়োজন-২৫০টি, ঘাস চাষ বৃদ্ধির জন্য নার্সারী স্থাপন-৫.০০ একরসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ মো. দেলোয়ার হোসেন জজানান, কৃষি প্রধান এলাকা হিসেবে বরগুনা জেলা বেশ অগ্রগামী। বর্তমানে এ অঞ্চল শিল্পয়োন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সামিল হয়েছে। স্বাভাবিক হারেই এখানকার কৃষির সম্মৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।