গাংনীতে অসহায়-হতদরিদ্রদের আহার যোগাচ্ছে কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি)

433

বাজিস-১
মেহেরপুর-দরিদ্র-কর্মসংস্থান
গাংনীতে অসহায়-হতদরিদ্রদের আহার যোগাচ্ছে কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি)
মেহেরপুর, ২৯ মে, ২০১৮ (বাসস) : জেলার গাংনী উপজেলায় ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে চলমান ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ (ইজিপিপি) প্রকল্পের আওতায় কর্মসংস্থান পেয়েছে ১ হাজার ৭০৬ জন অতিদরিদ্র শ্রমজীবী নারী পুরুষ। তাদের কজে সাফল্যের মুখ দেখেছে এ কর্মসূচি। এ কর্মসূচির কল্যাণে উপজেলার উন্নয়নে যোগ হয়েছে একটি নতুন মাত্রা।
মেহেরপুর কৃষি নির্ভরশীল জেলা। এখানে নেই তেমন কোনো কল-কারখানা বা শিল্প-প্রতিষ্ঠান। কৃষি কাজই এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র কর্মসংস্থানের মাধ্যম। আবার অনেক কৃষকই দিনযাপন করেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ থাকে না। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। ঋণের টাকা পরিশোধে হতে হয় নাজেহাল। এসব দরিদ্র মানুষেরা যাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেই জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার চালু করেছে ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি’ (ইজিপিপি)।
গাংনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ২য় পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপজেলায় ১ হাজার ৭০৬ জন উপকারভোগীর বরাদ্দ আসে। প্রাপ্ত বরাদ্দ উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিভাজন করে মজুরি পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহে প্রেরণ করা হয়েছে।
গাংনীর রায়পুর ও ষোলটাকাসহ কয়েকটি ইউনিয়নের বেশ কিছু প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, গৃহীত প্রকল্পের শ্রমিকেরা স্বতস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন। প্রকল্পে শ্রমিকদের উপস্থিতি শতভাগ এবং কাজের মানও সন্তোষজনক। শ্রমিক সরদার ও শ্রমিকদের দাবি নিত্যপণ্যের যেদাম সেই তুলনায় তাদের মুজুরি অনেক কম। তারা মুজুরি বৃদ্ধির কথা শুনিয়েছেন।
রায়পুর ইউনিয়নের শ্রমিক সর্দার সুন্নাত আলী জানান, তার দলে যে সকল শ্রমিকেরা কাজ করেন তাদের সকলেই হতদরিদ্র। এ কর্মসূচির কারণে তাদের আয়ের পথ অনেক সহজ হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার আর্থিক দৈন্যতা দূর হয়েছে। ইউনিয়নের বাথানপাড়া গ্রামের নারী শ্রমিক মনোয়ারা কর্মস্থলে এ প্রতিবেদককে জানান, মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে প্রকল্পে দু’শ টাকা হাজিরায় কাজ করে খাওয়া অনেক সম্মানের। হেমায়েতপুর গ্রামের শ্রমিক দুলাল বলেন, চল্লিশ দিন করে বছরে দুই ধাপে মোট আশি দিনের প্রকল্পর কাজে তারা অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করতে পারছেন।
খাসমহল গ্রামের লেবার সর্দার ইলিয়াস হোসেন জানান, গ্রামের অনেক বয়স্ক মানুষ হবার কারণে তাদের কর্মসংস্থান হয়না। এ প্রকল্পর কারণে বয়স্ক নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হয়। তিনিসহ অন্য শ্রমিকেরাও তাদের মুজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।
তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শ্রমিক সর্দার আতাহার আলি জানান, প্রকল্পের আওতায় তার অধীনে অনেক বয়স্ক মানুষ কাজ করে। যারা কাজ করে তারা আনন্দের সাথেই কাজ করে। যার ফলে কাজের গুণগত মান শতভাগ নিশ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, গত অর্থ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রায় ১১ লাখ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলিপ কুমার সেন জানান, চলতি অর্থ বছরে ২য় পর্যায়ের চলমান কাজে স্বচ্ছতা আনার জন্য তারা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। প্রতিটি শ্রমিকের মজুরি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিতি সাপেক্ষে প্রদানের জন্য ব্যাংক ম্যানেজারদের অনুরোধ করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিভিন্ন দপ্তরের ট্যাগ অফিসার ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ কাজে নজরদারি করছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল বলেন, ‘আমি নিজে বিভিন্ন সময়ে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি পরিদর্শন করেছি এবং চলমান কাজে স্বচ্ছতা আছে। এভাবে কাজ চলমান থাকলে প্রকল্প শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হবে।’ তিনি শ্রমিকদের মুজুরি বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করেছেন বলেও জানান।
বাসস/সংবাদদাতা/মমআ/১১০০/নূসী