চিত্রপরিচালক মৃণাল সেন আর নেই

358

ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক মৃণাল সেন আর নেই। রোববার সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ ভবানীপুরে নিজের বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মৃণাল সেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
মৃণালের প্রয়াণে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একটা যুগের অবসান হল। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চিত্রজগতে।
মৃণালের জন্ম ১৯২৩ সালের ১৪ মে, বাংলাদেশের ফরিদপুরে। হাইস্কুলের পড়ালেখা শেষ করে তিনি কলকাতা চলে যান। পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু কখনও পার্টির সদস্য হননি।
১৯৫৫-এ ‘রাত ভোর’-এর মাধ্যমে পরিচালনা শুরু করেন মৃণাল। তার পরের ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’। ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান। তবে ১৯৬৯-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভুবন সোম’-এর মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি আসে আরো বেশি। ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত করে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃণালের প্রয়াণে শোক জ্ঞাপন করেছেন । তিনি টুইট করেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। ওঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।’
টুইট করে শোক জ্ঞাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও। ‘এই মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষ এমনকি সিনেমা জগতের খুব বড় ক্ষতি হলো।
মৃণাল সেল পরিচালিত ছবিগুলির মধ্যে উল্লে¬খযোগ্য হল, ইন্টারভিউ, ভুবন সোম, খারিজ, কোরাস, মৃগয়া, আকালের সন্ধানে, কলকাতা ৭১, আকাশকুসুম, অন্তরীণ, খ-হর, ওকা অরি কথা, একদিন প্রতিদিন, আমার ভুবন ইত্যাদি।
বেশ কয়েকবার জাতীয় পুরস্কারের সম্মান পেয়েছেন। এ ছাড়া দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, কান চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি সম্মান, বার্লিন ও মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের বেশ কয়েকটি পুরস্কারও পয়েছেন তিনি। সম্মানিত হয়েছেন শিকাগো, মন্ট্রিল, ভেনিস ও কায়রো চলচ্চিত্র উৎসবেও।
২০০২ সালে তাঁর পরিচালিত শেষ ছবি ‘আমার ভুবন’-এর জন্যও তিনি সেরা পরিচালক হিসাবে ‘সিলভার বিয়ার’ সম্মাননা পান।
মৃণালবাবুর মৃত্যুতে অমিতাভ বচ্চন, নন্দিতা দাস, মহেশ ভাট, সুজিত সরকার, মধুর ভা-ারকর, মনোজ বাজপেয়ী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট তারকারা শোক প্রকাশ করেছেন।
মৃণালের স্ত্রী গীতা ২০১৭-এ মারার যান। মৃণাল সেনের পুত্র কুণাল আমেরিকায় থাকেন। পরিবার সূত্র জানায়, কুণাল আগামিকাল দেশে আসবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত প্রয়াত পরিচালকেরা দেহ সায়েন্স সিটির কাছে শবদেহ সংরক্ষণালয়ে রাখা থাকবে।