ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ (বাসস) : নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা যৌথভাবে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠামালা আয়োজনের ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি শুরু হবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে।
নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী স্বরণে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে আগামী জানুয়ারি থেকে বছরব্যাপী একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় থাকবে বর্নাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব, নৃত্যনাট্য উৎসব, দেশব্যাপী নৃত্য প্রতিযোগিতা, ‘বুলবুল চৌধুরীর নৃত্যধারা’ বিষয়ে সেমিনার, বুলবুল চৌধুরী সৃষ্ট নৃত্যগীত, আলোচনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি।
আজ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ‘নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বছরব্যাপী আয়োজিত কর্মসূচি উপস্থাপন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, নৃত্য পরিচালক আমানুল হক, শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য, সংগীত ও আবৃতি বিভাগের পরিচালক সোহরাব উদ্দিন ও একাডেমির সচিব বদরুল আলম ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লাকী বলেন, নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পের পথিকৃত শিল্পী। শৈশব থেকেই তিনি নাচ, গান, ছবি আঁকা এবং গল্প-কবিতা রচনায় কাজ করেন। তবে নৃত্যশিল্পী হিসেবেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। রবীন্দ্রত্তোর যুগে নৃত্যশিল্পকে তিনি নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার চুনতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ বছর বয়সে গৃহশিক্ষকের কাছে আরবী ও ফার্সি শেখার মধ্যদিয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯২৪ সালে কলকাতা হাওড়া প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভ করে ১৯৪৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৩৭ সালে ওরিয়েন্টাল ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশন (ওএফএ) প্রতিষ্ঠায় বুলবুল চৌধুরী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নাচের সঙ্গে অভিনয় যোগ করে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পরিস্ফূট করে তোলাই ছিল তার নৃত্যনাট্যের প্রধান বৈশিষ্ট। তার নৃত্যনাট্যের বিষয়বস্তু ছিল বিচিত্র ধরণের এবং অসাম্প্রদায়িত চেতনাসম্পন্ন। হিন্দু-মুসলিম পুরাণ কাহিনী, রূপকথা, লোককাহিনী, ঐতিহাসিক চরিত্র, সামাজিক সমস্যা, সমকালীন ঘটনা, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি। দেশের এই গুণী শিল্পী ১৯৩৪ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ৭০টি নৃত্যনাট্য রচনা ও পরিচালনা করেন। রচনা করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পটভূমিতে ১৯৪২ সালে উপন্যাস ‘প্রাচী’। লিখেছেন ছোটগল্প। ১৯৪১ সালে কলকতায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘কলকাতা কৃষ্টি কেন্দ্র’। নৃত্যশিল্পে অসাধারণ অবদান রাখায় তার নামে ঢাকায় ১৯৫৫ সালের ১৭ মে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমি’। ১৯৫৩ সালে তিনি নাচের দল নিয়ে ইউরোপের বৃটেন, আয়ারল্যান্ড, হলান্ড, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স সফর করেন।
শিল্পী আমানুল হক বলেন, নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী সৃষ্ট নৃত্যনাট্যগুলো ও কম্পোজিশন আজও সংগ্রহ করে একত্রিত করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে শিল্পকলা একাডেমি যদি উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তিনি সর্বাত্বক সহযোগিতা করবেন। তার বক্তব্যের আলোকে এক প্রশ্নের জবাবে লিয়াকত আলী বলেন, একাডেমি পর্ষদের সভায় আজকের সব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে প্রয়োজনে দেশে এবং কলকাতায় গবেষক নিয়োগ করে বুলবুল চৌধুরী সৃষ্টিকর্ম সংগ্রহ করা হবে।