মুক্তিযুদ্ধে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করে দেয়

390

ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকান্ড ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর ঘটনা যা বিশ্বব্যাপী মানুষকে স্থম্ভিত করেছিল। সেদিন বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসররা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, একাত্তরে যুদ্ধের সময় ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডে বাংলাদেশিদের মধ্যে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর লোকেরা পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল।
জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গতকাল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসির উদ্দিন আহেমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কথা সাহিত্যিক রশীদ হায়দার। আলোচনায় অংশ নেন শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান আসিফ মুনীর,অধ্যাপিকা ফাহমিদা খানম এবং ডা.নুজহাত চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাসেম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহেমদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ৪৭টি প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং এক মিনিট নিরবতা পালন করে মহান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
প্রধান অতিথির ভাষণে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন , বাঙাল জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন ১৪ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি যখন চূড়ান্ত বিজয়ের পথে রয়েছে, ঠিক তথনই পাকিস্তানী বাহিনী আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তাদের হত্যা শুরু হরে। ১০ ডিসেম্বর শুরু করে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড চালায়।
রশীদ হায়দার বলেন, ভাষা আন্দোলন ,স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবীরা প্রথম কাতারে থাকতেন। তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালিদের বাঙালি জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনই পরবর্তিতে রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়। এ জন্যেই শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন।
অধ্যাপিকা ফাহমিদা খানম বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়াকার ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকান্ড ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বরোচিত ঘটনা। এই হত্যাকান্ডের পর পৃথিবীর সকল মানুষ স্মম্ভিত হয়ে যায়।
শিল্পী হাসেম খান বলেন, বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন একটি জাতির বিবেক। জাগিয়ে রাখেন তাদের রচনাবলীর মধ্যদিয়ে, সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে, শিল্পী গানের সুরে, শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে, চিকিৎসক সেবাকেন্দ্রে এবং রাজনীতিক মাঠের আন্দোলনে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, রাজকার, আলশামস বাহিনীর সহযোগিতায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল। অনেক পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তাবায়িত হতে চলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে এবং হচ্ছে।