২০১৯ সালের মধ্যে ৩.৫৫ লাখেরও বেশি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হবে

245

॥ একেএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী ॥
ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে’র আওতায় ২০১৯ সালের মধ্যে সারাদেশে ৩.৫৫ লাখেরও বেশি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম শামসুদ্দিন বাসস’কে জানান, ১৯৯৭ সাল থেকে তিনটি ধাপে এ পর্যন্ত দেশব্যাপী সর্বমোট ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৪২ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে এবং প্রথম দুইটি ধাপ শেষ হয় ২০১০ সালে।
তিনি আরো জানান, ২০১৯ সালের মধ্যে ৪ হাজার ৮৪০.২৮ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রায় আড়াই লাখ পরিবারকে আশ্রয় দেয়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ গ্রহণ করে। জুলাই, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫২৯ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক শামসুদ্দিন বলেন, একই সময়ে প্রকল্প এলাকায় সর্বমোট ৮৬৪টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে এবং প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এইসব প্রকল্প এলাকায় পুনর্বাসিত জনগোষ্ঠী আয়বর্ধক কাজের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলছে।
তিনি আরো জানান, ‘এই প্রকল্পের আওতায় সরকার ইতোমধ্যে ৬০১ জন ভিক্ষুকসহ ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৫ গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন এবং ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে এই প্রকল্পকে আরো বেগবান করা হবে।’
এই প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষদের আয়বর্ধক কাজে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে তাদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে গাজীপুর জেলার বান্দরবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় ৭০জন কুষ্ঠরোগীকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য দিনাজপুর সদর উপজেলায় একটি ‘হিজড়া পল্লী’ তৈরী করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’র আওতায় কক্সবাজারে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৪শ’র বেশি পরিবারকে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে ১৩৯টি বহুতল ভবন তৈরি করছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের কাছে ২৫৩.৩৫ একর জমির ওপর এই প্রকল্প এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কক্সবাজারে একটি আধুনিক ট্যুরিস্ট জোন তৈরির কাজ চলছে এবং একটি শুঁটকি মাছের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর বাঁকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করবে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প এলাকাকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য একটি বাঁধ নির্মাণ করবে।
উপ-প্রকল্প পরিচালক এস এম হামিদুল হক বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ হওয়াদের জন্য ২০টি আশ্রয়স্থল স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পরিবেশ উদ্যোগ, যেমন, ন্যাশনাল এ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম অব এ্যাকশন (নাপা), বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি এ্যান্ড এ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপ) গ্রহণ করার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাস্তচ্যুত হওয়া পরিবারগুলোকে আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছে।