বাজিস-১ : নাটোরে জমজমাট শীতের সবজি উৎপাদন ও বিপণন

213

বাজিস-১
নাটোর-সবজি উৎপাদন
নাটোরে জমজমাট শীতের সবজি উৎপাদন ও বিপণন
নাটোর, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : সবজি ভান্ডার খ্যাত নাটোরে এখন শীতের সবজি উৎপাদন ও বিপণনের ভরা মৌসুম চলছে। বাজারে বিভিন্ন সবজির সরবরাহ বেড়ে কমে গেছে দাম। দাম কম হওয়ায় চাষিরা হতাশা প্রকাশ করলেও সাধারণ ক্রেতারা বেশ খুশী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নাটোর জেলায় চলতি মৌসুমে সাত হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অক্টোবর মাস থেকে সবজি চাষ শুরু হলেও অনেক চাষি আগাম সবজি চাষ করেছেন। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত রবি মৌসুমের সবজি চাষের সময় নির্ধারিত হলেও এখন পর্যন্ত চার হাজার ৪৪২ হেক্টর জমিতে সবজি চাষাবাদ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গোলআলুসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজির বিপণনে জমজমাট হয়ে উঠেছে নাটোরের স্থানীয় বাজারগুলো। বাজারে শিম, ফুল কফি, বাধা কফি, বরবটি, ধনিয়া পাতা, লাউ, পালং শাক, গাজর, টমেটো, মুলাসহ রকমারী সবজির সমারোহ। নতুন আলু প্রতিকেজি গড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুল কফি প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পাতা কফি প্রতি পিস ২০ টাকা, বেগুন ১৫ টাকা, লাউ প্রতিটি গড়ে ২৫ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ১০ টাকা, শিম ২৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি, টমেটো ৪০ টাকা, ধনেপাতা ৩০ টাকা কেজি, পালং শাক প্রতি কেজি ১৩ থেকে ১৬ টাকা, বরবটি ২৫ টাকা, পেঁপে ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা প্রতিকেজি, গাজর প্রতিকেজি ৪০ টাকা , করলা প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
নাটোর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ও ছাতনী এবং বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়াতে সবজির আড়ত প্রসিদ্ধ। এসব এলাকার আড়ত থেকে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতে যাচ্ছে শীতের সবজি। শহরের স্টেশন বাজারে তুলনামূলক কম দরে প্রচুর সবজির বিপণন হয় ভোর থেকে। ইদানিং অসংখ্য ভ্যানচালক ভ্যান বোঝাই করে সবজি ক্রয় করে শহরে ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায় নিয়োজিত হয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ী আলাল জানান, ভ্যান চালানোর চেয়ে সবজি ব্যবসা লাভজনক।
শহরের নীচাবাজার এলাকার নিয়মিত সবজি ক্রেতা গৃহিনী তহমিনা বেগম বলেন, এখন অন্য মৌসুমেও শীতের সবজি বাজারে পাওয়া যায়। তবে শীতকালে এর প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়। অর্গানিক সবজি উৎপাদনে কৃষক ও কৃষি বিভাগকে আরো তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান এ গৃহিনী।
নাটোর সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকার কৃষক সায়েদ উদ্দিন ২০ বিঘা জমিতে পাতা কফি চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। বাজারে সবজির দাম কমে গেছে, তাই মুনাফার পরিমাণও একটু কমবে বলে জানালেন তিনি। একই এলাকার কৃষক আফেল উদ্দিন জানান, তিনি পাতা কফি, গাজর, ফুল কফি, পালং ও লাল শাক চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ব্যাপক। বাজারে সরবরাহ বেড়ে দাম কমে গেছে বলে প্রত্যাশিত মুনাফার পরিমাণে তিনি আশাহত।
বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ জানান, রকমারী শিম উৎপাদনে বড়াইগ্রামের সুনাম দীর্ঘদিনের। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকাতে এখানকার সবজির চাহিদা। সেক্স ফেরোমেনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ও দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে অর্গানিক সবজি উৎপাদনে প্রদর্শনী খামার স্থাপন, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শস্য ও সবজি উৎপাদনে নাটোর অগ্রগামী। বৈচিত্রে ভরপুর নাটোরের কৃষি। এবার এখানে শীতকালীন সবজি ভাল হয়েছে। বাজারে ব্যাপক সরবরাহের কারণে সবজির দাম কমে গেলেও আগাম উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষি বিভাগের তৎপরতা অব্যাহত আছে।
বাসস/সংবাদদাতা/আহো/১০৩৫/নূসী