ভোট কারচুপি করে নির্বাচনে জেতার কোন অভিপ্রায় সরকারের নেই : প্রধানমন্ত্রী

819

ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় উল্লেখ করে বলেছেন, ভোট কারচুপি করে নির্বাচনে জেতার কোন অভিপ্রায় তাঁর সরকারের নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। আর কারচুপি করে নির্বাচনে জেতার কোন ইচ্ছে আমাদের নেই।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সন্ধ্যায় গণভবনে ৩০৭ জন জেষ্ঠ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি একথা বলেন। এসব কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিজয়ের জন্যে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তাঁর সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ খুশি হয়ে আমাদের ভোট দিলেই আমরা ক্ষমতায় থাকব, না হলে নয়।’
২০০১ সালের নির্বাচনের উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সেই নির্বাচনে আমরা ভোটের সংখ্যায় হারিনি। ‘অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমরা বেশি ভোট পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কম আসন দেয়া হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত একটি ডকুমেন্ট পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে কোন কোন আসন দেয়া হবে আর কোন কোন আসন দেয়া হবে না তা লাল, হলুদ, সবুজ ও নীল কালিতে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায়, সে বছর নির্বাচন কিভাবে মঞ্চায়িত হয়েছে।’
সাবেক সচিব অশোক মাধব রায়, ড. খন্দকার শওকত হোসেন, এসএম আলী কবির ও কামরুন্নেসা খানম এবং সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম শামীম চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা খন্দকার, কৃষিবিদ ওয়াসিউজ্জমান আখন্দ, ইঞ্জিনিয়ার কবির আহমেদ ভূঁইয়া, অধ্যাপক দিলারা হাফিজ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচাল ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, রাষ্ট্রদূত আবদুল হান্নান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক নোমানুর রশিদ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনসার আলী খান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। সাবেক মূখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

দেশের আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এলে তারা আবারো দেশকে ধ্বংস করবে।
তিনি বলেন, ‘সুতরাং আমরা খুনি ও যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও আগুন সন্ত্রাসীদের দলকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা (স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি) ক্ষমতায় এলে আবারো দেশকে (অতীতের মতো) ধ্বংস করবে। কিন্তু আমরা ধ্বংসের দিকে যেতে চাই না। আমরা চাই অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলে চলমান উন্নয়ন কর্মকা- শেষ করা হবে না। ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এসব কাজ শেষ করবে না। কারণ তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের অগ্রগতি এবং জনগণ ভালো থাকুক তা চায় না, কেন তারা তা করবে? ‘কিন্তু আমরা জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। আর এজন্য সরকারের ধারাবাহিকতা অত্যাবশ্যক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০৭১ সালে আমাদের শতবার্ষিকী উদযাপনের পরিকল্পনা করেছি এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ গ্রহণ করেছি। ততদিন আমরা বেঁচে না থাকতে পারি কিন্তু আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উপযুক্ত পরিকল্পনা রেখে যেতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সকলকে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাবেক সরকারি কর্মচারিদের তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধারার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘জনগণের জন্য কেবল কাজ করলেই হবে না। জনগণকে এই কাজের কথাগুলো বার বার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা এ সময় জনঘণের ওপর বিএনপি-জামাতের অত্যাচার নির্যাতন বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের সেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সে সময় সারাদেশে আওয়ামী লীগের হাজার- হাজার নেতা-কর্মী বিএনপি-জামায়াতের নৃংসতার শিকার হরেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় বছরের শিশুও তাদের পাশবিকতা থেকে রেহাই পায়নি। সে সময় কয়েকশ’ সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল বিএনপি-জামায়াত। দেশের সেই সব অন্ধকার দিনগুলো জনগণ এখনও ভুলে যায়নি।
সে সময়কার সরকারি চাকুরেদের দুর্দশাকে হৃদয়বিদারক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কখনই কোন প্রতিহিংসামূলক বা বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে কোন কর্মকান্ড পরিচালনা করেনি।
তিনি বলেন, কারণ আমি মনে করি সরকারি চাকুরেরা সরকারি কর্মকর্তা এবং তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু কে কতখানি দায়িত্ব নিয়ে দক্ষতা এবং আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করলেন সেটাই আমার কাছে বিবেচ্য বিষয়।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪২ জন সাবেক মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব, বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, রাষ্ট্রদূত, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব।
তাদের মধ্যে রয়েছেন- দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ আর খান, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক মাসুদ আহমেদ ও মো. আবুল কাশেম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মেসবাহ উদ্দিন, মো. মেসবাহ-উল আলম ও ইউনুসুর রহমান এবং সাবেক প্রধান তথ্য অফিসার এ কে এম শামীম চৌধুরী।
সাবেক সচিবদের মধ্যে- আবু তাহের, হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, মাহবুব-উল আলম খান, শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, আবদুল মালেক মিয়া, দেওয়ান জাকির হোসেন, সুনিল কান্তি বোস, সৈয়দ আলী কবির, শেখ খুরশিদ আলম, আতাহারুল ইসলাম, সমর চন্দ্র পাল, নূরুল হক, আবদুল মান্নান হাওলাদার, এ টি কে এম ইসমাইল, শফিকুল আজম, কামরুন্নেছা খানম, মো. মিজানুর রহমান, খন্দকার আসাদুজ্জামান, মো. কাজী আখতার হোসেন, আরাস্তু খান, এম এ কাদের সরকার, ড. চৌধুরী মো. বাবুল হাসান, এ এইচ এম মাসুদ সিদ্দিকী, মো. আজিজুর রহমান, শফিক আলম মেহেদী, কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ, এ এল এম আবদুর রহমান, হুমায়ুন খালিদ, আনোয়ার ফারুক, শাহিন খান, মুনসুর আলী সিকদার, জহুরুল আলম, রীতি ইব্রাহিম, নজরুল ইসলাম খান, ড. খন্দকার শওকত হোসেন, মিকাইল শিপার, খোরশেদ আলম চৌধুরী, এম এ হান্নান, এ কে এম আমির হোসেন, নূরুন্নবী তালুকদার, ফখরুল ইসলাম, গোলাম রাব্বানী, সিরাজুল ইসলাম, শ্যামল কান্তি ঘোষ, এ এম বদরুদ্দোজা, শিরীন আখতার, খন্দকার ইফতেখার হায়দার, কায়কোবাদ হোসেন, আবু মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, নাজমুল ইসলাম, মমতাজ আলা শাকুর আহমেদ, নাজিম উদ্দিন, অশোক মাধব রায়, ড. প্রসান্ত কুমার রায় ও শামসুল হক, এডিবি’র সাবেক কর্মকর্তা পারভেজ ইমদাদ এবং সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক সদস্য, কাজী নাসিরুল ইসলাম, মো. ওয়াজেদ আলী খান ও জহুরুল আলম সংহতি প্রকাশ করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে সাবেক রাষ্ট্রদূত এ টি এম নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মো. আজিজুল হক, গোলাম মোহাম্মদ, মো. আবদুল হান্নান, আতিকুর রহমান, ইখতিয়ার চৌধুরী, ওয়াহিদুর রহমান ও আবদুস সাত্তার সংহতি প্রকাশ করেন।
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি আবদুল মান্নান, মো. শামসুদ্দোহা খন্দকার, অমূল্য ভূষণ বড়–য়া ও আবদুল মান্নান, সাবেক ডিআইজি মোস্তাক হোসেন, এ এইচ এম ফিরোজ কবির, গোলাম মোস্তফা, শাহ আলম শিকদার, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আবদুল জলিল মন্ডল ও শফিকুর রহমান সংহতি প্রকাশ করেন।
পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রকৌশল, বন, ডাক, পুলিশ, ট্যাক্স, তথ্য, টেলিকম, কাস্টমস ও এক্সাইজ, অডিট ও একাউন্টস, রেলওয়ে, খাদ্য ও কৃষি ক্যাডারের ১৬৫ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও সংহতি প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।