বরগুনায় হারিয়ে যাচ্ছে গোলপাতা ও খেজুর গাছ

220

বরগুনা, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮ (বাসস) : দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় খেজুর এবং গোলপাতার গাছ অর্থকরী সম্পদ। যা দিয়ে এক সময়ে স্থানীয় লোকজনের বেশ ভালো অংকের টাকা আয় হয়তো। বর্তমানে অযত্নে আর অবহেলার কারণে দিনদিন গোলপাতা ও খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
বরগুনাসহ উপকূলীয় এলাকায় শীতকালীন খেজুরে গাছের রস এখন দুস্প্রাপ্য হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার, ঠিকভাবে পরিচর্যা না করা ও গাছ কাটার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার খেজুর গাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা ইট ভাটায় জ্বালানি কাঠ হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহারের কারনে দেদারচ্ছে কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও উপকূলীয় এলাকায় শীতের শুরুর সাথে সাথে পোশাদাররা খেজুর গাছ কাটা (বিশেষ পদ্ধতিতে কান্ডে খাঁজ কাটা) শুরু করেছে। সাধারণত সকাল-বিকেল দুবেলাই রস সংগ্রহ করা হয়। রস দিয়ে পিঠা ও পায়েস তৈরি হয়।
বৈঠাকাটা বাঁধে উপর খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী আলমাছ খান জানান, এক যুগ আগেও শীত শুরু হলে গড়ে ২০-২৫টি খেজুর গাছ কেটেছি। এ থেকে প্রতিদিন ৮-১০ কলস রস সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতাম। এখন সর্বোচ্চ ৪-৫টি গাছ কাটছি। খেজুর গাছ পাওয়াই মুস্কিল হয়ে পড়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা বদরুল আলম জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকায় ইটের ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বন্ধ না করা হলে এ এলাকা থেকে এক সময় এ গাছ গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
উপকূলীয় অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী গোল গাছ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, খাল-জলাশয় ভরাট, পানিতে লবণাক্ততার তীব্রতা ও চাষাবাদের অভাবে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের খাল-বিল ও নদীর তীরে এক সময় প্রচুর নয়নাভিরাম দৃশ্য জুড়ে গোলপাতার গাছ দেখতে পাওয়া যেত। কালের বিবর্তনে এখন আর সেই গোলপাতার গাছ আগের মতো দেখা যায় না।
গাছের নাম গোল হলেও আকৃতি অনেকটা নারিকেল পাতার মতো। এর উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুটের বেশি। সাধারণত স্বল্প লবণাক্ত পলিযুক্ত মাটিতে ভাল জন্মায়। এই জনপদের সর্বত্র রাখাইন উপজাতি এবং নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারে ঘরের ছাউনি হিসেবে গোলপাতা ব্যবহার করা হতো। এছাড়া গোল গাছের রস দিয়ে সুস্বাদু গুড় উৎপাদন হয়। উপজাতি সমপ্রদায়ের লোকজন গোল গাছের রস দিয়ে চোলাই মদ তৈরি করে থাকে। গাছের নি¤œাাংশ দিয়ে নিউজপ্রিন্ট, হার্ডবোর্ড ও আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন করা সম্ভব। গোল গাছ চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক, সহজসাধ্য এবং ব্যয়ও কম। গোল গাছ ভাইরাসজনিত রোগ থেকে নিরাপদ। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। কোন পরিচর্যা করতে হয় না। মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজনও হয় না। শুধুমাত্র বীজ (গাবনা) সংরক্ষণ করে তা নিচু জমিতে পুঁতে রাখলেই চারা গজায়। এর এক একটি গাবনায় ১শ থেকে দেড়শ’টি পর্যন্ত বীজ থাকে। এ বীজ থেকেই গাছ জন্মায়। এতে ব্যয়ের চেয়ে আয় অনেক গুণ বেশি। নদী বা মাটি ক্ষয় রোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। মাটি কামড়ে বা আঁকড়ে রাখে। গোলগাছ নদী ভাঙ্গনরোধে বিশেষ অবদান রাখছে। উপকূলীয় এলাকায় যে সকল গোলপাতার গাছের বাগান রয়েছে তা প্রকৃতির অশেষ দান।
গাছ পাচারকারী ও বনাঞ্চল উজাড়কারীরা অবাধে কেটে নিয়ে যাচ্ছে এসব বাগান। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন বিভাগ নতুন করে গোলপাতার গাছ আবাদের কোন উদ্যোগ আজও নেয়নি।
বরগুনার কৃষি বিভাগের উপপরিচালক শাহী নূর আজম জানান, উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার একর জমি অব্যবহৃত অথবা অনাবাদী না রেখে এসব জমি ব্যরহার করা যেতে পারে। এতে প্রয়োজনীয় গুড়ের চাহিদা মেটানো এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গোলপাতার গাছ বিরাট সহায়ক হতে পারে বলে ।