পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগান

231

শেরপুর, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : সারি সারি রাবার গাছ, ফলজ, শাল, গজারী ও সেগুনবনের বিন্যাস খুব সহজেই প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাবে নিশ্চিত। পাহাড়ি ঝর্না ও ঝোড়ার স্বচ্ছ জল হৃদয়ে তুলবে আনন্দের হিন্দোল। পাহাড়, বনানী, ঝর্না এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝেও কৃত্রিম সৌন্দর্য্যরে অনেক সংযোজন রয়েছে এখানে। যার এক কথায় পরিচিতি ‘সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগান’। এখন পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগান।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগানে রাবার উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাগানটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি গারো পাহাড় এলাকায় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই বাগানটিকে আরও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা সম্ভব। রাবার বাগানটি শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৮ কিঃমিঃ উত্তরে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশের গারো পাহাড়ে অবস্থিত।
শেরপুরের শিল্পউদ্যোক্তা ইদ্রিস মিয়া ১৯৮৯ সালে প্রায় ৮০ একর জমি সরকারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লীজ নিয়ে এ বাগান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ পর্যন্ত বাগানে রাবার গাছের সংখ্যা ৯ হাজার।
বর্তমানে ৫ হাজার গাছ থেকে প্রতিদিন ৩শ’ কেজি করে রাবার (কষ) উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি কেজি রাবার (কষ) এর বর্তমান মূল্য ১৩০ টাকা। প্রতিটি রাবার গাছ লম্বা ২০ থেকে ২৫ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। রাবার গাছের বয়স ৪০ বছর পার হলে আস্তে আস্তে রাবার উৎপাদন হ্রাস পাবে। তখন এসব গাছ বিক্রি করে দেওয়া হবে।এছাড়াও রাবার বাগানে কাঁঠালসহ ফলজ বৃক্ষ লাগানো আছে।
বাগানের মালিক কর্তৃপক্ষতারা জানান, সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গারো পাহাড় জুড়ে রাবার বাগান করা সম্ভব। পাশাপাশি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। এছাড়াও এই পাহাড়ের মাটি চা উৎপাদনের জন্য বিশেষ উপযোগী। বাগানে রোপন করা রাবার গাছের কমপক্ষে ৭ বছর হলে রাবার উৎপাদন শুরু হয়। বিশেষ পদ্ধতিতে রাবার গাছ থেকে কষ সংগ্রহ করে কারখানায় মজুদ রাখা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য প্রেরণ করা হয়।
সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগান থেকে রাবার ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার পর বিভিন্ন কোম্পানি তা বিক্রি করে থাকে। এই বাগান প্রতিষ্ঠার ফলে এলাকার বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাগানে ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার সহ মোট ২০ জন কর্মচারী রয়েছে।
এছাড়া প্রতিদিন আরো বেশ কয়েক জন স্থানীয় শ্রমিক নিয়মিত ভাবে কাজ করে থাকে। রাবার উৎপাদন ছাড়াও এই বাগানের আশপাশের অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম।
বাগানের সারিবদ্ধ গাছ, সবুজের সমারোহ, বন্যপ্রাণীর ছোটাছুটি, রাবার আহরণ, উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি দেখার জন্য এখানে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।
বাগানের ম্যানেজার বিল্লাাল হোসেন জানান, রাবার চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। বেসরকারী ভাবে প্রতিষ্ঠিত এই বাগানের মতো আরও যদি জমি বরাদ্দ দেওয়া হয় তাহলে এই ব্যবসাকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করা সম্ভব।এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।
যেভাবে আপনি যাবেন :
এখানে আসার জন্য সড়কপথে যাতায়াত খুব সহজ। সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগান পর্যন্ত রয়েছে মসৃণ পিচঢালা সড়ক। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াত সবচেয়ে সহজ। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়কপথে। ঢাকা থেকে মাত্র ৪ ঘণ্টায় শেরপুরে আসা যায়।
শেরপুর শহর থেকে সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগানের দূরত্ব মাত্র ২৮ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি মাইক্রো অথবা প্রাইভেটকারে রাবার বাগানে যেতে পারেন। আর বাসে মহাখালী টার্মিনাল থেকে ঝিনাইগাতীতে। সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিকশা, লেগুনা কিংবা রিকশায় একদিনের জন্য ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকায় সোজা সন্ধ্যাকুড়া রাবার বাগান। শেরপুর শহরে রাত যাপনের জন্য ১শ টাকা থেকে ৫শ টাকায় গেস্ট হাউজ রুম ভাড়া পাওয়া যায়। শহরের আধুনিক মানের থাকার হোটেল রয়েছে।
এছাড়া থাকতে পারেন অনুমতি সাপেক্ষে সার্কিট হাউজ, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, পল্লী বিদ্যুৎ অথবা কিংবা এটিআই’র রেস্ট হাউজে। ঝিনাইগাতীর ডাকবাংলোতেও থাকতে পারেন। তবে থাকা খাওয়ার জন্য শেরপুর শহরে চলে আসাই উত্তম।