অরিত্রীর শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা কারাগারে

391

ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে কারাগারে পাঠিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সাঈদ আজ এ আদেশ দেয়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ার মামলার আসামি হাসনা হেনা।
আজ হাসনা হেনাকে আদালতে হাজির করে তাঁকে জামিন না দেয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ডিবির পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার। আদালতকে তিনি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছেন, অরিত্রীর বাবার সুস্পষ্ট ধারণা যে, শিক্ষকদের আচরণের কারণে অরিত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। মামলার তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে তিনি পালিয়ে থেকে মামলার তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি করবেন। অন্যদিকে হাসনা হেনার পক্ষে আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম তার জামিন চান। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে বুধবার রাতে উত্তরার একটি হোটেল থেকে হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল। গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের টিমের সহকারী কমিশনার আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়।
অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় তার বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে ৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার ৩ নম্বর আসামি হাসনা হেনা। বাকি দুই আসামি হলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও প্রভাতী শাখার প্রধান শিক্ষক জিন্নাত আরা।
আজ বুধবার বিকেলে মামলাটি পল্টন থানা থেকে অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবিতে পাঠানো হয়।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষিকা হাসনা হেনা মগবাজার ডাক্তারের গলি এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে তিনি উত্তরা আত্মগোপন করেন। সেখান থেকে গ্রেফতারের পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। আজ তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
এদিকে ডিবির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, ভিকারুননিসার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখা প্রধান জিনাত আখতার আদালতে আত্মসমর্পণ না করলে তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে।
গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিনাত আখতার ও অরিত্রীর শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর অভিযোগ, গত রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে এমন অভিযোগে অরিত্রীকে সোমবার তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সোমবার স্কুলে গেলে শাখা প্রধান তাদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে দেয়া ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন। পরে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে দিলীপ অধিকারীর দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলছে। এ ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।