সুনামগঞ্জে জুলাই মাসেই টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ শুরু

350

সুনামগঞ্জ, ২৪ মে, ২০১৮ (বাসস) : আগামী জুলাই মাসেই সুনামগঞ্জে টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি এ ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ আব্দুল মজিদ কলেজের পূর্বদিকে সাত একর জমির উপর টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট হবে। এ ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ৭৮ কোটি ৩১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে প্রাক্কলন বস্ত্র পরিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। শুরুতে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। নতুন করে আরও ২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার নতুন অধিগ্রহণকৃত জমির ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশে টেক্সটাইল সেক্টরে দুই লাখ ৭০ হাজার দক্ষ জনবল প্রয়োজন হবে। কিন্তু বর্তমানে এ কাজের জনবল তৈরির জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে ৮৭ হাজার ৯৫০ জন কর্মী বের হবে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সারাদেশে পর্যায়ক্রমে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও টেক্সটাইল কলেজ স্থাপন করছে। সুনামগঞ্জ বাংলাদেশের একটি পশ্চাৎপদ অঞ্চল। এ অঞ্চলে ইতোপূর্বে কোন টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়নি। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে আরো ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এবং এ এলাকার শিক্ষার্থীদের মেধাকে বিকশিত করে দেশের উন্নয়নের কাজে অংশীদার করার জন্য সুনামগঞ্জ জেলায় একটি টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার পাঠিয়ে বস্ত্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। এরপর থেকেই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়।
গত বছরের ২৬ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয় সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট প্রকল্প। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য ২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা গত সপ্তাহে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অনুকূলে এসেছে।
গণপূর্ত বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবন, বয়েজ হোস্টেল, মহিলা হোস্টেল, অফিসার ডরমেটরি, স্টাফ ডরমেটরি, প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার, অফিসার কোয়াটার ও স্টাফ কোয়ার্টারসহ প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণের জন্য ৭৮ কোটি ৩১ লাখ ৩৩ হাজার টাকার প্রাক্কলন তৈরি করে বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে ইতিপূর্বে পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রসেনজিৎ পাল বলেন, ‘মঙ্গলবার এ প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা আরও ২ একর জমির ডিজিটাল সার্ভে করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ। অধিগ্রহণ করা জমি বুঝিয়ে দেবার পর স্থাপত্য অধিদপ্তর নকশা করবে। এরপর ডিজাইন করার কাজ শেষ করে পানি সরে যাবার পরই অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
এ প্রকল্পটির অগ্রগতি শুরু থেকেই অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে দেখভাল করছেন রাজধানীর লুজিন ফ্যাশন গ্রুপের পরিচালক পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা শ্যামল রায়।
শ্যামল রায় মঙ্গলবার জানিয়েছেন, প্রায় দেড় বছরের চেষ্টায় সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট প্রকল্পের কাজ জুলাই মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর প্রবল আগ্রহের জন্যই এ প্রকল্পটি এখন বান্তবায়নের পথে। তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জের মতো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এসে আমরা যারা রাজধানীতে ব্যবসা করছি, বিশেষ করে শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে যে দুয়েক জন কাজ করছেন, তারা নিশ্চয়ই বুঝেন এখানে স্থান করা কত কঠিন। এ প্রকল্পটির অফিসিয়েল কাজ আগ্রহ ভরেই করেছি। আমার মনে হয়েছে পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অগ্রসরমান ও সম্ভাবনাময় খাত। সুনামগঞ্জ পিছিয়ে থাকা জেলা। এখানকার মানুষ একফসলি জমির উপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতির দুর্যোগের কারণে ফসল তোলাও প্রতিবছরই অনিশ্চিত থাকে। এ অঞ্চলের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এ ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি মনে করেই কাজ করেছি।’
প্রকল্পের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রথম বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৫ কোটি টাকা। এটি বেড়ে এখন হয়েছে ১১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮৪২ টাকা ২১ পয়সা। প্রথম দিকে জমি অধিগ্রহণের কথা ছিল ৫ একর, এখন হয়েছে ৭ একর। নতুন অধিগ্রহণ করা ২ একর জমিতে খেলার মাঠ, শহীদ মিনার ও মসজিদ হবে। জুন মাসের মধ্যেই অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এবং বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী যৌথভাবে এ প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন।’
তিনি জানান, ২ বছরের মধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানের সকল অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করা হবে।