শিল্পকলা একাডেমিতে যন্ত্রসংগীত উৎসব জমে উঠেছে

878

ঢাকা, ৮ জানুয়ারি, ২০১৮ (বাসস): শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথম বারের মতো আয়োজিত যন্ত্রসংগীত উৎসব জমে উঠেছে। সাতদিনের এই উৎসবে দেশের ৪৪ জেলার দুই শতাধিক যন্ত্রশিল্পী ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেছেন। নানা ধরনের যন্ত্রসংগীতের মুর্ছনায় অভিভুত হচ্ছেন শত শত দর্শকস্রোতা।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে নন্দন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব। প্রতিদিনই দর্শক-স্রোতা বাড়ছে। অনেক রাত পর্যন্ত শিল্পীদের যন্ত্রসংগীত পরিবেশনায় একাডেম প্রাঙ্গণ সংগীতময় হয়ে উঠছে। আগত দর্শকরা যাতে খানাপিনায় কষ্ট না করেন সে জন্যে পাঁচটি খাবারের দোকানও স্থাপিত হয়েছে। খাবার স্টলগুলোতে বিকেল থেকে দর্শকরা নানা জাতের পিঠা ও অন্যান্য খাবার কিনে খেতে পারছেন।
বাংলা সংগীত জগতের নয়শত ধরনের নানা যন্ত্রসংগীত বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে না। এইসব যন্ত্রগুলোর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমি এই সময়োপযোগী উৎসবের আয়োজন করেছে। গত পয়লা জানুয়ারি শুরু হয় উৎসব। সাতদিনে দেশের চুয়াল্লিশ জেলার দুই শতাধিক যন্ত্রশিল্পীরা যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেছেন। পরিবেশিত যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে অর্কেস্ট্রা, হাওয়াই গিটার,সেতার,তবলা,বেহালা, সারোগীট, একোর্ডিয়ান, সারেঙ্গী, চতুরঙ্গী, সরোদ, সন্তর, মন্দিরা, জুমরীসহ অসংখ্য সংগীতযন্ত্র। অনুষ্ঠিত হয়েছে সংগীতযন্ত্রের ওপর দুটি সেমিনার।
প্রতিদিন একাডেমির নন্দনমঞ্চে বিকেল চারটায় শুরু হচ্ছে যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা । রাত নয়টা পর্যন্ত চলছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে স্রোতারা উপভোগ করছেন পরিবেশনা। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে উৎসব। আরও ত্রিশজন শিল্পী তিনদিনে যন্ত্র পরিবেশন করবেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত যন্ত্রশিল্পীরা উৎসবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা বাসসকে জানান,এই উৎসব আরো আগে থেকেই করা প্রয়োজন ছিল।
‘চতুরঙ্গী’ যন্ত্রশিল্পী দীপন সরকার আজ বাসসকে জানান, চব্বিশবছর ধরে তিনি চতুরঙ্গী পরিবেশন করছেন। পিতার কাছ থেকে এই যন্ত্র বাদনের শিক্ষা নিয়েছেন। কোনকালেই এতো বড় উৎসবে দাওয়াত পাননি। উৎসবে অংশ নিয়ে তিনি অসংখ্য যন্ত্রপরিবেশনাও উপভোগ করে উপকৃত হয়েছেন।
‘সেতার’ শিল্পী সত্যজিৎ চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতার বাজাচ্ছি। যন্ত্রসংগীতের এতো বড় উৎসেব কোনদিনই পরিবেশনের সুযোগ হয়নি। এই উৎসবে এতো মানুষের সন্মুখে যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করে ভীষণ ভাল লাগছে। প্রতিবছর এ উৎসব হওয়া দরকার।
বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় বাঁশীবাদক গাজী আজিজুল হাকিম বলেন,দেশের সংগীতের ইতিহাসে এই যন্ত্রসংগীত উৎসব স্বরণীয় হয়ে থাকবে। যন্ত্রীদের মিলনমেলা বসেছে এইখানে। এই অভিজ্ঞতা যন্ত্রীদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে সাহস জোগাবে।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী উৎসব সম্পর্কে বাসসকে বলেন,দেশে প্রথম বারের মতো এই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতকে গড়ে তুলেছে বিভিন্ন যন্ত্রীরা। যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া সংগীত তথা গানের কল্পনাই করা যায় না। আমাদের সংগীতকে আলোকিত করা অনেক যন্ত্রসংগীত শিল্পী প্রয়াত হয়েছেন। অনেক শিল্পী নিজেই যন্ত্র আবিস্কার করেছেন। তাদের সেই হারিয়ে যাওয়া যন্ত্র পুনরায় সংগীতে ব্যবহার করার চিন্তা থেকে এবং বর্তমান প্রজন্মের যন্ত্রীদের প্রতিভার বিকাশের প্রয়োজনে এই উৎসবের আয়োজন।
শিল্পকলা একাডেমির সংগীত বিভাগের উপ-পরিচালক শামীমা আখতার জাহান বলেন , যে চিন্তা থেকে একাডেমি এই উৎসবের আয়োজন করেছে,তা অনেকটাই সফল হচ্ছে। ৬২টি জেলা থেকে যন্ত্রসংগীত দল এতে অংশ নিচ্ছে। এতো যন্ত্রীর একই আসরে সস্মিলন হয়ে পরিবেশনা আর কোনদিনই দেশে হয়নি।