ঐহিত্য আর ইতিহাস ধারণ করেছে জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী

439

ঢাকা, ২২ ২০১৮(বাসস) : বিভিন্ন শিল্পীদের বৈচিত্রময় আঙ্গিক ও উপকরণে নির্মিত ভাস্কর্যের সমারোহে অত্যন্ত উপভোগ্য হয়ে উঠেছে ‘ চতুর্থ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী ’। ছন গুণী ভাস্কর্য শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্মে নানা বিষয়কে উপস্থাপন করেছেন এ প্রদর্শনীতে।
ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ,বাঙালি সংস্কৃতি, প্রেম, ঐতিহ্য , প্রকৃতিসহ জাগতিক জীবনের নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে প্রদর্শিত ভাস্কর্যগুলোতে। এসব ভাস্কর্য নির্মাণ শৈলিতে খুবই উঁচু মানের। দেশের এই শিল্প মাধ্যমটি যে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐশ্বর্যমন্ডিত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে এই প্রদর্শনী তারই রূপ লাভ করেছে।
এ প্রদর্শনীতে মোট ১৩২টি ভাস্কর্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। এতে অংশগ্রহণের জন্য সারাদেশ থেকে একুশ বা তদুর্ধ বয়সের ১৮৭ জন শিল্পীর মোট ৩৯২টি শিল্পকর্ম জমা পড়েছিল। নির্বাচকমন্ডলী তা থেকে বাছাই করে ৯৮জন শিল্পীর মোট ১১৭ শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য নির্বাচন করেন। এ ছাড়াও ১১ জন আমন্ত্রিত শিল্পী ও প্রয়াত ৪ শিল্পীর একটি করে আরও ১৫টি শিল্পকর্মসহ এই প্রদশর্নীতে মোট ১৩২টি ভাস্কর্য প্রদর্শিত হচ্ছে।
চতুর্থ ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত শিল্পকর্মগুলোর মধ্যেকার ৫টি শিল্পকর্মকে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ও তাদের শিল্পকর্মগুলো হচ্ছে, খোকন চন্দ্র সরকারের ‘ আমার বিশ্বাসের অন্তরালে-৯’ ,পলাশ সাহার ‘ সংকট ’, কাজী সালাউদ্দিন আহমেদের ‘ফ্রেগমেন্টেড-১’, অলোক কুমার সরকারের ‘ সম্পর্ক ’ ও শিমূল দত্ত’র ‘ চাপ সামলাও -৭ ’ ভাস্কর্য।
প্রদর্শনীতে হামিদুজ্জামান খানের ‘বিশ্রাম ’,ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ‘শিরোনামহীন’, ভাস্কর রাশার ‘গরীব মা,ধনী মা’, মাহবুব জামালের ‘ ম্যান ফিগার’, শ্যামলী ছৌধুরীর ‘ ঢুলী ’ শামীম শিকদারের ‘ বাউল’, নিতুন কুন্ডু’র ‘ বিজয় ’, জাদিহুল ইসলাম জাহিদের ‘ কম্পোজিশন-১’ উত্তম কুমার তালুকদারের ‘ কাঠের গল্প’, তিলোত্তমা ভৌমিকের ‘ বিশ্বাস বনাম আবেগ’, তারানা হালিমের ‘ আহত-১ ’,মৃনাল হকের ‘ ইস্পাতের কান্না-২’ উজ্জ্বল খানের ‘ স্বাধীনতা সংগ্রামে গণহত্যা’, লাকী ওসমানের ‘ প্রকৃতি’, ভাস্কর্যগুলো দর্শকদের মাঝে বিপুলভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
প্রদশর্নী সম্পর্কে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বাসসকে বলেন, প্রদশর্নীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা অনেকইে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর তাৎপর্যপূর্ণ ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় ভাস্কর্য সম্পর্কে জনমনে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। তা কাটিয়ে উঠার জন্যে এ প্রদর্শনী ভূমিকা রাখবে। এ শিল্পের বিকাশ ও বিস্তৃতির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের কাছে আমদের আধুনিক মানের শিল্পীদের ভাস্কর্য পরিচিত করতেই এবারের প্রদশর্নীটি আয়োজন করেেেছ একাডেমি।
শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক শিল্পী আশরাফুল আলম পপলু প্রদর্শনী বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ভাস্কর শিল্পীরা নিত্য নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভাস্কর্যশিল্পকে ক্রমাগত এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তাদেরই প্রতিনিত্ব রয়েছে এবারের প্রদর্শনীতে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত চতুর্থ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী গত ৯ মে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আাসাদুজ্জামান নূর। প্রদশর্নী চলবে আগামী ৭ জুন পর্যন্ত। সময় সূচি হচ্ছে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। সবার জন্যে প্রদর্শনী উন্মুক্ত। শুক্রবারের সময় হচ্ছে বিকেল তিনটা থেকে রাত ৮টা। রমজান মাস হওয়া সত্বেও প্রতিদিনি বহু সংখ্যক দর্শক উপভোগ করছেন প্রদর্শনী।