বাজিস-১ : নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে চলছে কমলা লেবুর চাষ

393

বাজিস-১
নাটোর-কমলালেবু
নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে চলছে কমলা লেবুর চাষ
নাটোর, ২৭ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : দেশের ফল ভান্ডার খ্যাত নাটোরের সোনা ফলানো মাটিতে এবার কমলা লেবুর চাষ হচ্ছে। বাগাতিপাড়া উপজেলার রহিমানপুর গ্রামের কৃষক সাজেদুর রহমান নিজ উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে এ বিদেশী ফলের বাগান করে সফলতা পেয়েছেন।
ভরা মৌসুমে গাছে গাছে কমলার সমারোহ। ফলের ভারে নুব্জ হয়ে গেছে এক একটি গাছ। প্রত্যেক গাছে ছোট বড় মিলিয়ে অর্ধশতের অধিক করে কমলা শোভা পাচ্ছে। সাজেদুর রহমানের বাগানে এখন ক্রেতাদের সমাগম। নাটোরের আব্দুলপুর থেকে এসেছেন ফল ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক। ছয় মণের ক্রেতা আব্দুল খালেক বলেন, আমি এ বাগান থেকে তিন-চার দিন পর পর পাঁচ থেকে ছয় মণ করে কমলা কিনছি। অপর ক্রেতা নাটোর ষ্টেশন বাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী নান্টু মিঞা জানালেন, এ কমলা ভারতের নাগপুর এলাকার জাত। উপরে সবুজ, ভেতরে খানিকটা সাদাটে। বাগান থেকে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে কিনে বিক্রি করি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
চলতি নভেম্বর মাস থেকে বছরের দ্বিতীয় দফায় কমলা বিক্রি শুরু করেছেন সাজেদুর, চলবে ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে অন্তত ৮০ মণ কমলা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন সাজেদুর-যার বাজার মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এরআগে চলতি বছরের আগষ্ট মাসে প্রথমবারের মত কমলার ফলন পাওয়া যায়। ঐসময় প্রায় ১০ মণ কমলা বিক্রি করা হয়।
কমলা গাছের সাথে সাজেদুরের সহাবস্থান শুরু হয় দুই বছর আগে। বাড়ির পাশে ইজারা নেয়া সোয়া দুই বিঘা জমিতে উপজেলা তথা জেলার প্রথম চাষি হিসেবে তিনি কমলা লেবুর বাগান করেন। দিনাজপুর থেকে প্রাপ্ত চারশ’ কমলার চারা দেড় বছরের মাথায় ফল দিতে শুরু করে।
পাঁচ ফুট উচ্চতার কমলা গাছের পরিচর্যায় তেমন কোন বেগ পেতে হয় না। এর পরিচর্যা অনেকটা পেয়ারা গাছের মত। দশ থেকে পনের বছর ধরে একটানা ফল দেয় এক একটি গাছ। মৌসুমে এক গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ কেজি কমলা পাওয়া সম্ভব।
কমলা লেবুর বাগান আশা জাগিয়েছে সাজেদুরকে। তাই এর পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন তিনি। বললেন, নিজস্ব জমির পাঁচ বিঘাতে কমলা বাগান সম্প্রসারণ করবো অচিরেই। গাছের চারা তৈরির জন্যে পরামর্শ দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। বাতাবী লেবুর গাছের ডালের সাথে কমলা লেবুর গাছের ডাল গ্রাফটিং করে কমলা লেবুর চারা তৈরি সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী।
মোমরেজ আলী বলেন, অর্গানিক কমলা উৎপাদন এবং প্রচারনার মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ উপজেলায় ইতোপূর্বে মাল্টা চাষে সফলতার পথ ধরে এবার কমলা চাষেও সফলতা আসবে বলে আশাবাদী এ কৃষিবিদ।
উৎপাদিত কমলার স্বাদ সম্পর্কে বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মাসুম বলেন, মিস্টির সাথে একটুখানি টকের মিশ্রন বাগাতিপাড়ায় উৎপাদিত কমলাকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট এনে দিয়েছে। পাহাড়ের কমলা এখন সমতলে চাষ হচ্ছে এবং এর স্বাদ বাজারের প্রচলিত কমলার প্রায় কাছাকাছি।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, বিভিন্ন অপ্রচলিত ফল ও ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে নাটোরের কৃষি। জেলায় কমলা চাষের পরিধি বাড়াতে কৃষি বিভাগ সব রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বাজারে চাহিদা থাকায় সম্ভবানাময় ফল হিসেবে ভবিষ্যতে জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও কমলা লেবুর চাষ সম্প্রসারিত হবে। এতে মানুষের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১০২৮/নূসী