বাজিস-৭ : খুলনা ওয়াসার আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের পানি সরবরাহ শুরু জানুয়ারিতে

344

বাজিস-৭
খুলনা- পানি -সরবরাহ
খুলনা ওয়াসার আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের পানি সরবরাহ শুরু জানুয়ারিতে
খুলনা, ২৬ নভেম্বর ২০১৮ (বাসস) : খুলনা নগরীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খুলনা ওয়াসার সবচেয়ে বড় প্রকল্পের পানি সরবরাহ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে গড়ে ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন কমিশনিং ও টেস্টিং চলছে। প্রথমে সরবরাহ হবে নগরীর লবণচরা জোনে। পরবর্তীতে বাকী ৯টি জোনে পর্যায়ক্রমে এ পানি সরবারহ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোপুরি প্রকল্পটি চালু হলে প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি উৎপাদন সম্ভব হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ২০১১ সালের ২৭ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন মেলে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) ফান্ড থেকে ৭৫০ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র ৫২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ও জাইকা’র ১ হাজার ২৮৪ কোটি ১২ লাখ ৭৮ লাখ টাকা।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতি নদী থেকে পানি সংগ্রহ করা হবে। মধুমতি নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে অপরিশোধিত এ পানি খুলনা শহর সংলগ্ন রূপসা উপজেলার পাথরঘাটা এলাকায় পরিশোধন করা হবে। সেখানে গড়ে দৈনিক ১১ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি শোধনাগারের পাশাপাশি অপরিশোধিত পানি সংরক্ষণের জন্য ৭ লাখ ৭৫ হাজার কিউবিক মিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এক থেকে দুই সপ্তাহ মধুমতির পানি কিছুটা লবণাক্ত হয়ে পড়ে। সে সময় জলাধারের পানি পরিশোধন করে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা হবে।
জানা গেছে, এডিবি’র অর্থায়নে ৩টি ইন্টারন্যাশনাল কন্ট্রাক বিডি-আইসিবি প্যাকেজ ও ২টি ন্যাশনাল কন্ট্রাক বিডি-এনসিবি প্যাকেজ ৭টি ডিস্ট্রিবিউশন রিজার্ভার এবং ১০টি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের মাঠ পর্যায়ে কাজ শেষ হয়েছে। ১০টি ওভারহেড ট্যাংক ও ৭টি ডিস্ট্রিবিউশন রিজার্ভার নির্মাণের স্থানগুলো হচ্ছে চরেরহাট, লবণচরা, নতুন বাজার, ছোট বয়রা, রায়ের মহল, বয়রা হাউজিং এবং দেয়ানা। বাকি ৩টি ওভারহেড ট্যাংক হচ্ছে বানিয়াখামার, মিরেরডাঙ্গা এবং দৌলতপুরের পাবলা।
এদিকে, ‘ক্লিয়ার ওয়াটার ট্রান্সমিশন মেইনস ইনক্লুডিং রিভার ক্রসিং’র মাধ্যমে রূপসার পানি শোধনাগার থেকে রূপসা নদীর তলদেশ হয়ে খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে ৭টি রিজার্ভার পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। এসব লাইনে ৩শ’ মিঃ মিঃ থেকে ১২শ’ মিঃ মিঃ ব্যাসের ৩৩ কিঃমিঃ ডাকটাইল আয়রন পাইপ মাঠ পর্যায়ে বসানো সম্পন্ন হয়েছে। ‘ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাইপ লেয়িং’ কাজের আওতায় নগর এলাকায় বিভিন্ন ব্যাসের প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানো শেষ হয়েছে। যার মাধ্যমে সকল গ্রাহকদের সুপেয় পানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়া প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতোমধ্যেই নগরীর সাত নম্বর ঘাট এলাকায় রেলওয়ের জমিতে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতাধীন খুলনা ওয়াসার ১০ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট (প্রথম পর্যায়ে ৬ তলা) প্রধান ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ওই ভবনে বর্তমান দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। এছাড়া চার কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশ্বরপাশা ও চরেরহাট এলাকায় ২টি জোনাল বিল্ডিং নির্মাণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
অপর দিকে, জাইকার অর্থায়নে ‘ইমপাউন্ডিং রিজার্ভার এ্যান্ড সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প¬ান্ট’ প্যাকেজের আওতায় রূপসা উপজেলার তিলক ও পাথরঘাটা নামক স্থানে ১১০ লাখ লিটার (এমএলডি) ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার এবং ইমপাউন্ডিং রিজার্ভার নির্মাণের মুল কাজ শেষ হয়েছে। এখন কিছু অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ বাকি রয়েছে। এছাড়া ‘ওয়াটার ইনটেক ফ্যাসিলিটি এ্যান্ড ‘র’ ওয়াটার ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন’ প্যাকেজে মোল¬াহাট ব্রীজ সংলগ্ন মধুমতি নদীর পাড়ে (ইনটেক স্ট্রাকচার এ্যান্ড পাম্প হাউজ) নির্মাণ কাজও শেষ পর্যায়ে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচলক মোঃ আব্দুল্লাহ পিইঞ্জ বলেন, খুলনা শহরের সুপেয় পানির সঙ্কট দীর্ঘদিনের। এ সঙ্কট নিরসনের লক্ষে এই অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ এই প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। বর্তমানে প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে গড়ে ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন কমিশনিং ও টেস্টিং চলছে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করে জানুয়ারিতে পানি সরবরাহ শুরু হচ্ছে। প্রথমে সরবরাহ হচ্ছে নগরীর লবণচরা জোনে। পরবর্তীতে বাকী ৯টি জোন নতুন বাজার, বানিয়াখামার, ছোট বয়রা, বয়রা, নতুন রাস্তা, চরের হাট, দেয়ানা, মিলেরডাঙ্গা ও রায়েরমহলে পর্যায়ক্রমে এ পানি সরবরাহ করা হবে। পুরোপুরি প্রকল্পটি চালু হলে টার্গেটকৃত ৪৫ হাজার বাড়িতে প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি সরবারহ সম্ভব হবে। ফলে এটি ওয়াসার বড় সফলতা।
বাসস/সংবাদদাতা/১৯৪০/মরপা