মেহেরপুরে সবজি উৎপাদন কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে

526

মেহেরপুর, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : এ শীতে সবজি উৎপাদন খ্যাত জেলা মেহেরপুরের দিগন্তজোড়া মাঠে চলছে সবজি চাষ, পরিচর্যা ও আহরণ। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন মেহেরপুর জেলা থেকে ৭০-৮০ ট্রাক সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় এ জেলার চাষিরা ধান-পাট চাষের পরিবর্তে ঝুঁকেছেন সবজি চাষের দিকে। আর সবজি চাষ করে এ জেলার চাষিরা তাদের ভাগ্য ফিরিয়েছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেব মতে, জেলার আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সারা বছরই প্রায় ৮ হাজার থেকে দশ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়ে থাকে। তবে শুধুমাত্র শীত মৌসুমে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে নানা ধরনের সবজির আবাদ করে থাকেন জেলার চাষিরা।
অঞ্চল ভেদে জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে বিভিন্ন সবজির উৎপাদন কম বেশি হলেও উল্লে¬খযোগ্য সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ঢেড়স, করল¬া, পটল, কাকরোল, মূলা-গাজর, শিম-বরবটি লাল-শাক উৎপন্ন হচ্ছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর, টুঙ্গি, কাঁঠালপোতা ও সোনাপুর গ্রামের মাঠে পর্যাপ্ত শিম উৎপন্ন হচ্ছে। গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মাঠে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল-করল¬া, শশা সদর উপজেলার শোলমারী, রাইপুর ও খন্দকারপাড়া গ্রামের মাঠে লাল শাক, পুঁই শাক, আলমপুর, গোপালপুর ও মদনাডাঙ্গা গ্রামের মাঠে লাউ, মিষ্টি আলু, মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর, সোনাপুর, বাগোয়ান ও আনন্দবাস গ্রামের মাঠে ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে ঢেঁড়স, শশা ইত্যাদি। এসব সবজি মেহেরপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার টুঙ্গী গ্রামের শিম চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবছরে তিনি সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এদিকে ভালো দাম পাওয়ায় এলাকার শিম চাষিরা বেজায় খুশি।
একই গ্রামের শিম চাষি হযরত আলী জানালেন- প্রতিবিঘা জমির শিম চাষে প্রায় ২০ হাজার টাকা করে খরচ হলেও প্রতি বিঘা জমির শিম অন্তত ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন চাষি।
মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের শসা চাষি মাসুদ বলেন, আগাম শশা চাষ করে চাষিরা খুব বেশি লাভবান হতে পারেন।
গাংনীর সাহারবাটি গ্রামের সফল সবজি চাষি মহসিন আলী ও আইনাল হক জানালেন, তাদের এলাকার মাটি সবজি চাষের জন্য শতভাগ খাঁটি। সবজি চাষ করে অল্প খরচে অধিক লাভ করা যায়। তাই যাদের নিজস্ব জমি নেই; তারা বর্গা নিয়ে সবজি চাষ করছেন।
একই গ্রামের চাষি রুহুল আমিন জানালেন, এ বছর তিনি ৭ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি, ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন। এক বিঘা জমির কপি আবাদে তার ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও তিনি পাচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তবে লাউ চাষে খরচ খুব কম। তিনি এক লাখ টাকার লাউ বিক্রি করার আশা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড.মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, এ জেলার মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। জেলা কৃষি বিভাগ চাষিদের সবজি চাষের ওপর প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাটি মাঠ দিবসের ব্যবস্থা করে আসছে। নতুন নতুন সবজি আবাদে তাদের উদ্বুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।