নাটোরে খেজুরের জমজমাট ব্যবসা

320

নাটোর, ২০ মে, ২০১৮ (বাসস) : খেজুর ছাড়া ইফতার পূর্ণতা পায়না। ইফতারের রকমারী খাবারের ভিড়ে খেজুর থাকতেই হবে। রোজাদার ব্যক্তিদের রোজা ভাঙ্গা অর্থাৎ ইফতারের সূচনা হয় খেজুর দিয়ে। দিন শেষে রোজাদারদের ক্লান্ত শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তির উৎস খেজুর। ইফতারের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হওয়ার কারণে নাটোরে এখন জমজমাট খেজুরের ব্যবসা।
নাটোরে খেজুর বিপণনে নিয়োজিত রয়েছেন একজন আমদানীকারকসহ মোট নয়টি আড়তদার। এসব আড়তের একটি শহরের কানাইখালী এলাকায়, দুইটি রেল স্টেশন এলাকায়এবংঅবশিষ্ট ছয়টি মাদ্রাসা মোড় এলাকায়। এসব খেজুর বিপণন কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়ছে শহর ও গ্রামের খুচরা ফল বিক্রেতাসহ মুদিখানার দোকান গুলোতে।
আড়তগুলো রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এখন রকমারী খেজুরের সমারোহে ভরপুর। এর বেশীরভাগটা আমিরাতের দাবাসজাতীয় খেজুর-যার ২০ কেজির প্যাকেট মূল্য দুই হাজার টাকা। বড়ই খেজুরের দর আরো কিছুটা বেশী। নি¤œদরের ভালো খেজুরের কেজিপ্রতিমূল্য গড়ে দুইশ’টাকা। তবে বস্তায় আসা নি¤œমানের খেজুরের ক্রেতাও রয়েছেন। এসব খেজুর আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি দরে। উচ্চবিত্ত ও রুচিশীল কিছু ক্রেতার জন্যে রয়েছে মরিয়ম খেজুর-যার পাঁচ কেজির প্যাকেট মূল্য সাড়ে তিনহাজার টাকা। সবচেয়ে উন্নত আম্বর খেজুরের ক্রেতা নাটোরের আড়তে নেই-যার কেজি প্রতি মূল্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।আমিরাতছাড়াও এসব আড়তে সৌদি আরব, মিশর, আলজেরিয়া,তিউনেশিয়া ও প্যালেস্টাইন এর খেজুর বিক্রি হচ্ছে।
নাটোরের আড়তদাররা সমষ্টিগতভাবে ট্রাকভাড়া করে ঢাকার বাদামতলী মোকাম থেকে খেজুর নিয়ে আসেন। এতে কার্টুন প্রতি পরিবহন খরচ কম হয়। রমজানের এক সপ্তাহ আগে থেকেই আড়তগুলো খেজুর বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছে।রমজান মাসে ব্যাপক ভাবে খেজুর বিক্রি হলেও বছরের অন্য সময়গুলোতে এখন সীমিত পরিমাণে খেজুর বিক্রি হয়।
আমদানীকারক মেসার্স স্বচ্ছ ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর গোপাল চন্দ্র দত্ত বলেন, প্রতিদিন দু’শ’ থেকে চারশ’কার্টুনবিক্রি হচ্ছে। বিগত বছরের তুলনায় দাবাস ও বড়ই খেজুরের দাম খানিকটা বেশী বলে জানালেন এ আমদানীকারক।
শুধু শহর নয়গ্রামের হাট-বাজারগুলোতেও এখন খেজুর বিক্রি হচ্ছে- এককভাবে এবং অন্য ফলের সাথে। নাটোরের খুচরা বিক্রেতা ছাড়াও দামে পড়তা হওয়ার কারণে রাজশাহী, নওগাঁ ও বগুড়ার কিছু ক্রেতা ও নাটোরের এসব আড়ত থেকে খেজুর ক্রয় করেন বলে জানালেন মাদ্রাসা মোড়ের তাসনীম ফলভান্ডারের প্রোপ্রাইটর জাহাঙ্গীর আলম। আড়তের নতুন কার্যক্রম শুরু করেছেন ফারুক হোসেন। ফারুক হোসেন জানান, প্রতিদিন আমার আড়তে ৪০ থেকে ৫০ কার্টুন খেজুর বিক্রি করছি।
নাটোরের ফলের দোকান ছাড়াও মুদিখানার দোকানগুলোতে খুচরা পর্যায়ে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। সোনালী স্টোরের প্রোপ্রাইটর মিঠু কুমার দাস জানান, স্থানীয় আড়ত ছাড়াও বাদামতলী থেকে অপ্রচলিত ধরনের খেজুর এনে বিক্রি করছি। বাজারে অন্য কোন ফল তেমনভাবে না ওঠায় খেজুরের বিক্রি আশানুরূপ ভালো।
পাল্টে যাচ্ছে মানুষের খাদ্য গ্রহণ সংস্কৃতি। নাটোরে কিছু পরিবারে শুধ ুইফতার নয়, সেহেরীতেও খেজুর খাওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রমজানের গন্ডি পেরিয়ে সারা বছরই খেজুর ব্যবহার হচ্ছে। দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ ক্ষমতা ছাড়াও উপকারী সব খাদ্য উপাদানে ভরপুর হওয়ায় বাড়িতে সারা বছর ধরে খেজুর খাওয়া হয় বলে জানালেন কলেজ শিক্ষক মাসুমা সুলতানা রুপা।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, ৩০ গ্রাম অর্থাৎ চারটি খেজুরে ৯০ ক্যালরি শক্তি ছাড়াও এটি ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, জিংক, ভিটামিন-বিসহ ১৫টি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানে ভরপুর। আরগ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজের ডিপোবলে খাওয়ার সাথে সাথে এটি শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। খেজুরে প্রচুর আঁশ থাকায় কোষ্ঠ কাঠিন্যে উপকারী এবং এর খাদ্য উপাদান পরিপাক তন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। খেজুর কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রের উন্নয়ন করে। খেজুরের উচ্চমাত্রার পলিফেনল শরীরের টক্সিন বের করে দেয়। এসব কারণে ইফতার ছাড়াও সেহেরীতে খেজুর আদর্শ খাবার। আর তাই সকলের কাছেই খেজুর সমাদৃত।