বাজিস-২ : ভোলায় একটি বাড়ি একটি খামারে ৭৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ

162

বাজিস-২
ভোলা-একটি বাড়ি একটি খামার
ভোলায় একটি বাড়ি একটি খামারে ৭৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ
॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ২০ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জেলায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট ৫৭ হাজার সদস্যদের মাঝে এ ঋণ প্রদাণ করা হয়। এর মধ্যে ৪০ ভাগ নারী ও ২০ ভাগ পুরুষ সদস্য রয়েছে। ঋণের টাকা বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ এসব পরিবার আজ তাদের অভাবকে জয় করেছে। প্রকল্পে ৭ হাজার ৩০০ জনকে সরাসরি প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে।
এছাড়া ৩৫ লক্ষ টাকার টিন, সাড়ে ১০ লাখ টাকার হাঁস-মুরগী, ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার গাছের চারা ও ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার সবজি চারা বিতরণ করা হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এ উদ্যোগ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দিন বদলের বিশেষ বার্তা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ প্রকল্প।
স্থানীয় বাংলার কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রেসক্লাব সাবেক সভাপতি এম হাবিবুর রহমান বাসস’কে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে দিন বদলের স্বপ্ন তা একটি বাড়ি একটি খামারে পূরণ হতে চলছে। সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ঋণ প্রদানের ফলে সাধারন মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন এসেছে। ঋণের টাকা নিয়মিত ব্যবহারে স্থায়ী আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে গ্রামের মানুষের।
হাবিবুর রহমান আরো বলেন, আমাদের পল্লী অঞ্চলগুলো আগের চেয়ে আজ অনেক বেশি স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। নেত্রীর একান্ত উদ্যোগে চালু হওয়া এ প্রকল্প বদলে দিচ্ছে হাজার হাজার পরিবারের ভাগ্য। আগামীতে এ প্রকল্পের মাধ্যমেই গ্রামগুলো থেকে শতভাগ দারিদ্র্যতা দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন এ প্রবীণ সাংবাদিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলায় মোট ৭৪ কোটি ৫৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা ঋণ বিতরণের মধ্যে সদর উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। বোরহানউদ্দিনে ৬ কোটি ৭০ লাখ। দৌলতখানে ১১ কোটি ৫২ লাখ। লালমোহনে ৮ কোটি ৮১ লাখ। তজুমদ্দিনে ৪ কোটি ৬২ লাখ। চরফ্যাসনে ২৩ কোটি ৭১ লাখ ও মনপুরা উপজেলায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
কথা হয় উপজেলা সদরের শীবপুর ইউনিয়নের নবীপুর এলাকার বাসিন্দা ঝর্ণা বেগমের সাথে। রিক্সাচালক স্বামী নিয়ে একসময় অনেক কষ্ট করেছেন। প্রকল্পের সদস্য হয়ে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। ঋণের টাকায় বাড়ির পাশের পুকুরে গড়ে তুলেছেন মাছের খামার। এছাড়া পুকুরের উপরে মাঁচা দিয়ে মুরগি ও কবুতর পালণ করছেন। ফলে মাছের জন্য আলাদা খাবার দিতে হয়না। আরো রয়েছে দেশী হাঁস-মুরগি। ঝর্ণা বেগম বাসস’কে বলেন, এ প্রকল্প তার জীবন বদলে দিয়েছে। বর্তমানে ৩ ছেলে নিয়ে সুখের সংসার তার। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
রতনপুর গ্রামের মো. কামাল হোসেন বলেন, তিনি ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালন শুরু করেন। বর্তমানে দুধ বিক্রি করে সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন। তিনি হয়েছেন স্বাবলম্বী। বড়ইপুরে মাত্র ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পান্না বেগম ছাগল পালনের মাধ্যমে অভাবকে জয় করেছেন। পরিবার নিয়ে পান্না বেগম এখন ভালো আছেন। এমনি করে বহু মানুষ এ প্রকল্পের ঋণের টাকায় নিজ অবস্থান বদল করতে সক্ষম হয়েছেন।
সদর উপজেলা প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. জসিমউদ্দিন বাসস’কে জানান, তার উপজেলায় মোট ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা ঋণের পুরোটাই সঠিক ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ মাছ চাষ, গবাাদ পশু, হাঁস-মুরগি, কবুতর পালন, সবজি চাষ, পোশাক তৈরি, পাটি বনুন, টুপি তৈরি, হস্ত শিল্প তৈরিসহ নানান কাজের মাধ্যমে দারিদ্র্যতাকে জয় করেছেন। ঋণের টাকায় সংসারে নারী-পূরুষ উভয় বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছে প্রকল্পে। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো একদিকে যেমন আত্মনির্ভরশীল হয়েছে তেমনি প্রশিক্ষিত দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তর হচ্ছে।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিআরডিবি’র উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. কাওসার হোসেন বাসস’কে বলেন, প্রকল্পের সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠকসহ তাদের সব ধরনের পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে। গৃহীত ঋণ দ্বারা পল্লী অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাই এটি আজ বৃহৎ সামাজিক কর্মসূচিতে রূপ লাভ করেছে।
বাসস/এইচএএম/মমআ/১২০০/-নূসী