নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এক বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন

1002

ঢাকা, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : বর্তমান বিশ্বে একটি অতি পরিচিত রোগের নাম ডায়াবেটিস। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানে ক্রমবর্ধমান এই রোগে আক্রান্ত হওয়া লোক নেই। পৃথিবীতে দূরারোগ্য অনেক রোগের ওষুধ আবিস্কার হয়েছে। আবিস্কার হয়েছে ডায়াবেটিসের ওষুধও। অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রতি ১১ জন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের মধ্যে একজন এ রোগে আক্রান্ত। আক্রান্তদের অনেকেই জানে না তারা এ রোগে আক্রান্ত। পুরুষ মহিলা সবাই আজকাল এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এক ধরনের বিশেষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। জোবেদা আক্তার পেশায় একজন চাকরিজীবি। তেত্রিশ বছয় বয়সী এই নারীর প্রথম মেয়ে সন্তানের বয়স এখন পাঁচ। গত সাড়ে চার মাস হল জোবেদা আবার সন্তান সম্ভবা। তাই এখন নিয়মিতই আসছেন ডাক্তারের কাছে। কিন্তু কিছুদিন আগে ডাক্তারের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা করান তিনি। আর সেখানেই ধরা পড়ে জোবেদার ডায়াবেটিস। এখন তিনি চলছেন সম্পূর্ণ ডাক্তারের নির্দেশনায়। যেকোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা।
নগরীর মালিবাগ এলাকায় থাকে নীরু ও হারুন দম্পতি। এক মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা দু’জন মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন তারা আরো একটি সন্তান নিবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্তান সম্ভাবা হলেন নীরু। কিন্তু বিধিবাম। ছয় মাসের মাথায় ধরা পড়ল নীরুর ডায়াবেটিস। পরে তার মিসক্যারিজ হয়ে যায়।
ডায়বেটিস রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণ ডায়াবেটিসের পাশাপাশি নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এক বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। আর এই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পদ্ধতিও বেশ জটিল। মূলত অনেক নারীরই এ সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। যখন রোগ নির্ণয় হয়, তখন ডাক্তারদের আর কিছুই করার থাকে না। যার ফলে মৃত্যু হয় অনেক নারীর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের পরিচালিত এক বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা যায়, ডায়াবেটিস হল বাংলাদেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ। ২০৪০ সালে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। আর বাংলাদেশ সরকারের পরিচালিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট’র প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বৈশ্বিক ওই গবেষণার বরাত দিয়ে জানায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে ৩১ হাজার ৪৬০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এই অসংক্রামক রোগে ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৬৯ হাজার জনে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির এক প্রকাশনায় দেখা যায়, প্রাপ্ত বয়স্কদের ৬.০৪ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও কয়েক লাখ শিশু এই ডায়াবেটিস (টাইপ-১) এ আক্রান্ত।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সাইদুর রহমান বলেন, মূলত ডায়াবেটিসের কারণে মানুষের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এই ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ যেমন- কিডনি, স্ট্রোক, হৃদরোগে ভুগতে পারেন।
তিনি বলেন, দেশে অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে এক বা একাধিক ডায়াবেটিসের রোগী আছে। এই রোগ একবার হলে আর ভালো হয় না। তবে রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপন করা সম্ভব।
ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, অনেক নারীই এখন গর্ভকালীন সমেয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। মূলত পরিবারের অন্য কারো ডায়াবেটিসের ইতিহাস, বেশি বয়সে সন্তান ধারন এবং অধিক ওজন এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আর ডায়াবেটিস থাকাকালীন সময়ে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। এসময় রোগী মারাও যেতে পারেন।
তিনি বলেন, কারো যদি একবার ডায়াবেটিস হয় তবে তাকে তা আজীবন বহন করতে হবে। যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। একমাত্র নিয়মানুবর্তিতাই পারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পাল্টাতে হবে এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, দেশব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীদের চিহ্নিত বা শনাক্ত করার কাজ করছে বর্তমান সরকার। অল্প কিছুদিনের মধ্যে উপজেলা হাসপাতাল থেকে মানুষ বিনা মূল্যে ডায়াবেটিসের ওষুধ পাবে।
মূলত সরকারের একার পক্ষে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সব স্তরের মানুষের ভুমিকা পালন করতে হবে।