খুদে ঘোড়-সওয়ারী তাসমিনা

386

কুড়িগ্রাম, ১৮ মে, ২০১৮ (বাসস) : ঘোড়ায় পিঠে বসে ১২ বছরের বালিকা তাসমিনা। সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে ছুটে আসছে তাসমিনার দূরন্ত ঘোড়া। হাজারো দর্শকের হর্ষধ্বনিতে মুখরিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার ময়দান। শেষ অবধি জয় হয় তাসমিনার। তার সাহস আর মনোবলে মুগ্ধ হাজারো দর্শক।
ঘোড়-সওয়ারী তাসমিনার জীবনে এমন ঘটনা হর-হামেশা ঘটে। নওগাঁর মেয়ে তাসমিনা এ পর্যন্ত অর্ধশত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অন্তত ৩০টি খেলায় ছিনিয়ে এনেছেন প্রথম পুরস্কার। পেয়েছেন নানা ধরনের পুরস্কার। এখন উত্তরাঞ্চলের যে কোন প্রতিযোগিতায় তাসমিনার অংশগ্রহণ মানেই ঢল নামে দর্শকের।
নওগাঁ জেলার ধামেরহাট উপজেলার পূর্ব চকসুবল গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর ওবায়দুল হোসেনের মেয়ে তাসমিনা। পড়েন সংঘেরপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে। বাবার একটি ঘোড়া ছিল বাড়িতে। ৭ বছর বয়স থেকেই ঘোড়াটিকে ঘাস খাওয়ানোসহ লালন-পালনে সহায়তা করতে গিয়ে সখ্যতা তৈরী হয় ঘোড়ার সাথে। তারপর ধীরে ধীরে নেমে যান প্রতিযোগিতার মাঠে। প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয় ঘোড় সওয়ারী তাসমিনার অভিযাত্রা। তারপর রংপুর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় মেলাসহ নানা আয়োজনে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় তাসমিনার ছুটে যাচ্ছেন।
তাকে একনজর দেখা আর ঘোড় পিঠে তাসমিনার কসরত দেখার জন্য ঢল নামে দর্শকের।
কুড়িগ্রাম সাদ্দির মোড়ের বাসিন্দা কলেজ ছাত্র সুজন মোহন্ত জানান, কুড়িগ্রামে তাসমিনার খেলা দেখার জন্য তার মতো অনেক দর্শক ছুটে আসে। তারা সবাই তার খেলা দেখে মুগ্ধ। শুধু কুড়িগ্রামে নয়, যেখানেই তাসমিনা, সেখানেই দর্শকের ঢল। তাসমিনার শিষ্য তার ছোট ভাই নুরুন্নবী। তাসমিনার প্রশিক্ষণে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া নুরুন্নবীও আজকাল অংশ নিচ্ছেন প্রতিযোগিতায়। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন প্রতিযোগিতার আগে দুই ভাই বোনকে তাঁর অফিসে ডেকে নতুন জামা উপহার দেন।
তাসমিনার বাবা ওবায়দুল জানান, তাসমিনার সাহস দেখে তিনিও অবাক। রেসের মাঠে কোন ভয় ডর নেই তার। তার কোন জমি জিরাত নেই। দিনমজুরি পেশা। অভাব-অনটন জেঁকে বসেছিল সংসারে। এখন তাসমিনার কল্যাণে সংসারের চাকা সচল হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে সম্মানি ও যাতায়াত ভাতা ছাড়াও মিলছে নানা পুরস্কার। তবে ঘোড়াটি ছোট হওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হয় তাসমিনার। তাসনিমা জানান, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় দর্শকের ব্যাপক সাড়া তাকে আনন্দ দেয়। লেখাপড়া শিখে সে পুলিশে চাকরি করতে চায়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিন আল পারভেজ জানান, দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন খুদে ঘোড়ওয়ারী তাসমিনার অবস্থান। তার সাহস, কৌশল ও বুদ্ধিমত্তা সত্যিই প্রশংসনীয়।