দামুড়হুদায় মাল্টা চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন চাষি বাবুল

250

চুয়াডাঙ্গা, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : মাল্টা চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ভগিরথপুর গ্রামের শিক্ষক আব্দুর রহিমের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন বাবুল। পারমানবিক শক্তি কমিশনে সরকারী চাকুরীজীবি সাখাওয়াত হোসেন বাবুল উপজেলার হেমায়েতপুর বেড়বাড়ী মাঠে ১৪ কাঠা জমি থেকে শুরু করে বর্তমানে ৪০ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। আগামী মাল্টা মৌসুমে অর্ধকোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
মাল্টা চাষী সাখাওয়াত হোসেন বাবুল জানান,২০১৩ সালের প্রথম দিকে খুলনা কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট থেকে ২ হাজার টাকা দিয়ে ২০টি বারি মাল্টা-১ জাতের চারা গাছ কেনেন। গাছগুলো গ্রামের হেমায়েতপুর বেড়বাড়ী মাঠের ১৪ কাঠা জমিতে রোপন করেন। পরের বছর তিনি ওই গাছগুলো কলম করে চারা গাছ তৈরি শুরু করেন। এর এক বছর পর একই মাঠে আরও ৩৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে প্রায় চার হাজার মাল্টার কলমের চারা গাছ রোপন করেন। বর্তমানে একই মাঠে দুই দাগে ৪০ বিঘা মাল্টা চাষ। গাছ লাগানোর দুই বছর পর গাছে ফুল আসতে শুরু করে। প্রথম বছর গাছে ফুল ফল কম আসলেও বর্তমানে গাছের ডালে ডালে মাল্টা ফলে ভরা।
প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৫৫-৭০ মণ মাল্টা ফল পাওয়া যাবে। যা বিক্রি হবে প্রায় তিন লাখ টাকায়। গাছের পূর্ণ বয়স হলে ফলন ও বাড়বে সেই হিসেবে ফলন ভালো হলে এবং প্রকৃতি সদয় হলে বছরে কোটি টাকার ফল বিক্রি হবে এমটি আশা করছেন তিনি। প্রতি কেজি মাল্টা ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার মাল্টার চারা ও মাল্টা বিক্রি করেছেন। আগামী বছর অর্ধকোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
মাল্টা বাগানে ৫ বছরে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। উচুঁ জমিতে মাল্টা গাছ রোপন করতে হয়। বাগানে রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সার বেশি ব্যবহার করা হয়। একটি মাল্টা গাছ থেকে বছরে ৩২০-৩৮০টি ফল পাওয়া যায়। এই জাতের মাল্টা ফল খেতে সুস্বাদুু। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। মাল্টা বাগানে নিয়মিত ৬জন শ্রমিক ২৫০টাকা দিন হাজিরায় কাজ করছেন।
যখন মাল্টা বাগান করি তখন গ্রামের মুরুব্বিরা রহস্য করে বলতেন বাবুল পাগল। কারণ ধান,পাট ও গম চাষ করাই কঠিন সেখানে মাল্টা চাষ পাগলামি। এখন তার সফলতা দেখে সকলেই অবাক। তাছাড়াও যেকোন গাছ লাগানো তার নেশাই পরিনিত হয়েছে। বর্তমানে বাগান থেকে চারা ও বিক্রি শুরু করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার বাগানে চারা কিনতে আসছে চাষিরা।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার শামিউল রহমান জানান, মাল্টার ফলন বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত আন্তঃ পরিচর্যাসহ সেচ,সার ও বালাই দমন ব্যবস্থাপনার সকল প্রকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী বছরে অধিক ফলন আনার জন্য মাল্টা সংগ্রহের সময় এক থেকে দুই ইঞ্চি ডালসহ মাল্টা সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে ওই স্থানে অধিক কুশি বের হয়ে অধিক মাল্টা ধরবে। ফলের মাছি পোকা দমনের জন্য ফলের ব্যাগিং ও দাগ মুক্ত মাল্টা পাওয়ার জন্য ফলের আকার মার্বেল সাইজ হলে এবামেকটিন গ্রুপের মাকড়নাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিরাপদ মাল্টা উৎপাদনের লক্ষে ফল সংগ্রহের এক থেকে দেড় মাস আগে থেকে সকল প্রকার বালাইনাশক ব্যবহার বন্ধের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই জাতের মাল্টার রং সবুজ হলেও খেতে মিষ্টি এতে কালার আনার জন্য কোনরকম কেমিকেল ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাসস/ সংবাদদাতা/১৫১৫/মরপা