মিডিয়াকে নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

732

ঢাকা, ১৭ মে, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সব কিছু নেতিবাচক লেখার ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের কল্যাণে যা কিছু তা ইতিবাচক লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে কোন মিডিয়া টিকে থাকতে পারে না। আমাদেরকে এই অসুস্থ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং কোন রকম ভীতি ও পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই সত্য তুলে ধরতে হবে।
আমরা দেশের জন্য কোন কিছু করলে তা যথাযথভাবে প্রকাশ করা উচিত। এটা আমার বা আমার দলের স্বার্থে নয় বরং দেশের স্বার্থে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএফইউজে, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন।
তিনি বলেন, প্রতি ১৫ দিন পর পর আমরা বিভিন্ন দৈনিক ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় পরিবেশিত সংবাদ সংগ্রহ করছি। এতে দেখা যায় আমাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অধিকাংশ নেতিবাচক সংবাদ এবং ইতিবাচক সংবাদ খুবই দুর্লভ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মিডিয়ার সব সময় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। দেশকে এগিয়ে নিতে জনকল্যাণ ও জনগণের আস্থা অর্জনে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণকে জানাতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের প্রত্যেক দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগের নীতিমালা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ৩৭ বছরের দায়িত্ব পালনকালে মিডিয়ার কাছ থেকে আমি তেমন সহযোগিতা পাইনি এবং কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আমাকে প্রতিকূল অবস্থার মাঝে এগিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু এতে আমার মাথা ব্যথা ছিল না। কারণ আমি জানি যে, আমি কি করছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সত্য ও সততার পথে থাকলে অবশ্যই ভাল ফল পাওয়া যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, একশ্রেণীর সংবাদপত্র আছে যারা ২০০১ সালের পরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপি-জামাত যে নির্যাতন চালিয়েছিল এবং ভয়ভীতি দেখিয়েছিল তা প্রকাশ করতে চায় না। তবে তিনি সেসব সংবাদকর্মীদের ধন্যবাদ দেন, যারা সেই সময় তাঁর পাশে ছিলেন এবং ওই সময়ে জনগণকে পরিস্থিতি অবহিত করার সাহস যুগিয়েছিলেন।
নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে দুটি সংবাদপত্রের সমালোচনা করেন, যেগুলোকে তিনি হঠকারী সাংবাদিকতার জন্য অপছন্দ করেন এবং গণভবনেও রাখেন না। তিনি বলেন, এই সংবাদপত্র দুটি আমার কাছে মূল্যহীন। আমি জনগণের জন্য কি করছি, আমার কাজের মাধ্যমেই তা দৃশ্যমান হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আশা প্রকাশ করেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের এবং ২০০১ সালে থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অন্যান্য সরকারের শাসনামলের কর্মকান্ড মূল্যায়ন করে জনগণই বুঝতে পারবে তাঁর সরকার এবং অন্যান্য সরকারের মধ্যকার পার্থক্য।
বিএফইউজে-এর সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। বিএফইউজে-এর মহাসচিব ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় ফেডারেশনের দশ জেলা ইউনিটের সভাপতিগণ বক্তব্য রাখেন এবং সাধারণ সম্পাদকগণ প্রধানমন্ত্রীকে একটি ক্রেস্ট প্রদান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষুকের জাতি নয়, কারণ তাঁর সরকার সর্বদা তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের উন্নয়নে জোর দিচ্ছে, যার ফলে মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
তিনি এ সময় জনগণের উন্নয়ন এবং তাদের কল্যাণে যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে তা তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
একটি বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে থাকবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম বার্ষিক সভায় বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতার স্বতন্ত্র নীতি আছে।
তিনি বলেন, ওই নীতিমালার কথা মনে রেখে যদি আমরা কাজ করি তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার ৬ মাসের মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেন, যা এর আগে সাংবাদিকরা কখনও পায়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় সাংবাদিকরা এখন একই ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করছে। কারণ তাঁর সরকার গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে বহু সাংবাদিককে হত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না।
নতুন ওয়েজবোর্ডসহ সাংবাদিকদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগেই অনেক দাবি পূরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নবম ওয়েজবোর্ডের অধীনে সাংবাদিকদের জন্য মহার্ঘ্য ভাতা ঘোষণা করতে তথ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের কর্মসংস্থানে আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারি খাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া চালু করে। এ পর্যন্ত ৪৪টি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টির সম্প্রচার চলছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে। দেশে সংবাদপত্রে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এ আইন বিরাট ভূমিকা পালন করছে। এক শ্রেণির লোক দেশে সংবাদপত্রে স্বাধীনতার অভাব রয়েছে বলে যে দাবি করেছে শেখ হাসিনা তার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম অতীতে আর কখনও এখনকার মতো স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মহাকাশে প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সুফল অধিকাংশ সাংবাদিক পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।