বাজিস-৭ : নীলফামারীতে কর্মক্ষেত্রে ফিরছেন কুষ্ঠ প্রতিবন্ধীরা

138

বাজিস-৭
নীলফামারী-কুষ্ঠ প্রতিবন্ধী
নীলফামারীতে কর্মক্ষেত্রে ফিরছেন কুষ্ঠ প্রতিবন্ধীরা
নীলফামারী, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : কর্মক্ষেত্রে ফিরতে শুরু করেছে নীলফামারীর কুষ্ঠ প্রতিবন্ধীরা। বাই-সাইকেল মেকার, ক্ষুদ্র ব্যবসাসহ ফিরেছেন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে। এমনকি প্রতিবন্ধীতা জয় করে কৃষি ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে শুরু করেছে তারা।
সমাজে এক সময়ে ধারণা ছিল কুষ্ঠ মারাত্মক একটি ব্যাধি। আক্রান্ত রোগীকে পরিবার এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতো অনেকে। সমাজের মানুষের ধারণা চিল রোগটি ছোয়াচে। কিন্ত সেসব প্রচলিত ধারণা ভুল প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। প্রমাণ করেছে কুষ্ঠ ভালো হয় অন্যান্য রোগের মতো নিয়মিত চিকিৎসায়। তারা পরিবার এবং সমাজে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। কিন্তু ওই রোগ আক্রান্ত বেশীরভাগ রোগীকে গ্রহণ করতে হয় প্রতিবন্ধীতা। তারাই সমাজে পরিচিত কুষ্ঠ প্রতিবন্ধী হিসেবে। স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারোনো এসব মানুষ পরিবারে হয়ে পড়ে অবহেলার পাত্র।
এবার সেই প্রতিবন্ধতাকে জয় করেছেন জেলার কুষ্ঠ প্রতিবন্ধীরা। তারা কৃষি, ক্ষুদ্রব্যবসাসহ বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জড়িয়ে পড়েছেন বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মে।
তাদের মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালীপুর গ্রামের ইসলাম খান (৫৫) একজন। ১৯৮৪ সালে সালে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসায় ভালো হয় ১৯৯০ সালে।
তিনি বলেন, ‘সমাজের মানুষ আগে ভালোভাবে আমাদেরকে গ্রহণ না করলেও ধীরে ধীরে সেটি কেটে যায়। এখন আমি নিজেকে কৃষিরসাথে জড়িয়ে সুস্থ জীবনযাপন করছি। ওই কৃষিই আমার পরিবারের প্রধান জীবিকা।’
তারমতো কর্মে ফিরেছেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের তাঁতীপাড়া গ্রামের আবু বক্কর (৫০)। সকলকে নিয়ে পরিবারে বসবাস করছেন তিনি। নিজেকে জড়িয়েছেন কৃষিরসাথে। বাড়ির ভিটেয় যেটুক জমি আছে তাতে ফলাচ্ছেন শাকসবজি।
ওই উপজেলার একই গ্রামের কুষ্ঠ প্রতিবন্ধী আলেফ উদ্দিন (৪৫) করছেন মৎস্য চাষ। সেটিই এখন তার জীবনের প্রধান জীবিকা।
তিনি বলেন, ‘এক সময়ে সমাজের মানুষের কাছে আমারা ছিলাম ঘৃনিত। কেউ মিশতে চাইতো না আমাদের সাথে। এখন সে ধারণা কাটিয়ে আমরা ফিরেছি কর্মক্ষেত্রে।’
জেলায় কুষ্ঠ প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে দ্যা লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা, মানুষের মধ্যে প্রচলিত বিরূপ ধারণা কাটানো এবং সমাজের মূল ধারায় তাদেরকে ফিরিয়ে কর্মক্ষেতে প্রতিষ্ঠত করতে গ্রহণ করেছে বিভিন্ন উদ্যোগ।
দ্যা লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন জানান, জেলায় আড়াই হাজারের উপরে কুষ্ঠ প্রতিবন্ধী রয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে সমিতি গঠন করে তাদেরকে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়েও তাদের সংগঠন আছে। এসব সদস্যের সঞ্চয় এক কোটি টাকার উর্ধ্বে। সঞ্চিত অর্থ তারা নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ করছেন।
তিনি বলেন,‘কুষ্ঠ রোগের বিরূপ ধারণা এখন কেটে গেছে। আমরা চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের কর্মক্ষেত্রে ফেরাতে দক্ষতা উন্নয়নের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। কৃষিক্ষেত্রেও তারা অনেকে প্রবেশ করছেন।’
বাসস/সংবাদদাতা/আহো/১৪২৫/নূসী