মেসির ফেরার দিনে বার্সার পরাজয়, জয়ের ধারা ধরে রেখেছে রিয়াল

217

বার্সেলোনা, ১২ নভেম্বর ২০১৮ (বাসস) : লিওনেল মেসির ফেরার দিনে ঘরের মাঠে লা লিগায় দুই বছরেরও বেশী সময় পর পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে বার্সেলোনা। রোববার ক্যাম্প ন্যুতে রিয়াল বেটিসের কাছে ৪-৩ গোলে পরাজিত হতে বাধ্য হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ইনজুরি থেকে ফিরে মেসি দুই গোল করলেও তা বার্সার পরাজয় আটকাতে পারেনি।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আলাভেসের বিপক্ষে ক্যাম্প ন্যুতে সর্বশেষ পরাজিত হয়েছিল বার্সা। কিন্তু টানা ৪২ ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর বেটিসের দুর্দান্ত কাউন্টার-এ্যাটাকের কাছে শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে হলো আর্নেস্টো ভালভার্দের শিষ্যদের।
এর তিন ঘন্টা পর রিয়াল মাদ্রিদ সেল্টা ভিগোকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দিয়ে নতুন কোচ সানতিয়াগো সোলারির অধীনে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে। আর এতে করেই প্রধান কোচের দায়িত্বে সোলারির নিয়োগ আরো কিছুটা পাকা হয়েছে। সোলারির অস্থায়ী দায়িত্বে এই নিয়ে চার ম্যাচে টানা জয় তুলে নিয়েছে গ্যালাকটিকোরা। এই জয়ে শীর্ষে থাকা বার্সার থেকে এখন রিয়ালের পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র চার। ১২ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে রয়েছে কাতালান জায়ান্টরা।
ম্যাচ শেষে মাদ্রিদ ক্লাব পরিচালক এমিলিও বুট্রাগুয়েনো বলেছেন, সোলারি দারুন করছে। যেভাবে রিয়াল এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা দারুণ খুশী। এদিকে নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে সোলারি বলেছেন, ‘দেখা যাক কি হয়। আমি কখনই ভবিষ্যতের জন্য খুব একটা বেশীদুর চিন্তা করিনা।’
এদিকে বার্সা পরাজিত হলেও ম্যাচ শেষে পেনাল্টি স্পট থেকে একটি ও ইনজুরি টাইমে মেসির দ্বিতীয় গোলই দলের জন্য সান্তনা হয়ে থাকবে। ভালভার্দে বলেছেন, আমরা এই অনুভূতি নিয়ে যাচ্ছিনা যে বেটিস আমাদের থেকে ভাল দল। আবার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোন কৃতিত্বও নিতে চাচ্ছিনা। তবে একটি কথাই বলতে চাই আমাদের আরো ভাল খেলা উচিত ছিল।
এই প্রথমবারের মত বার্সেলোনা পরাজয়ে মেসি দুই গোল করলেন। কিন্তু এই পরাজয়েও টেবিলের শীর্ষে ঠিকই নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে বার্সা। তিনটি ক্লাব এক পয়েন্ট করে পিছনে থেকে পরের স্থানগুলোর জন্য লড়াই করছে।
রোববার দিনের শুরুতে হুয়েসকাকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছেন আলাভেস। এস্পানেয়লকে একই ব্যবধানে পরাজিত করেছে সেভিয়া। ৮৯ মিনিটে দলের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেছে উইসাম বেন ইয়েডার। ভালভার্দে বলেন, টেবিলের শীর্ষে থাকাটা ঠিক আছে, আমি এতে দ্বিমত করছি না। কিন্তু এই ধরনের পরাজয়ে একটি বিষয় উপলব্ধি দেয় যে জয় কোনসময়ই সহজ নয়।
বার্সেলোনাকে পরাজিত করায় বেটিস টেবিলের ১২তম স্থানে উঠে এসেছে। আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলে গত মৌসুমেরও তারা ষষ্ঠ স্থানে ছিল। একইসাথে স্পেনের অন্যতম কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল যার ধারাবাহিকতা তারা ধরে রেখেছে। বার্সেলোনা মিডফিল্ডের বিপরীতে কাল বেটিস ছিল অনেক বেশী দ্রুত ও ক্ষুধার্ত। বারবার তারা মধ্যমাঠ ভেঙ্গে আক্রমনে যাবার চেষ্টা করেছে। ২০ মিনিটে তার ফলও পেয়ে যায়। উইলিয়াম কারভালহো প্রথম সুযোগের পাসে জুনিয়র ফ্রিপো বাম দিক থেকে বেটিসকে এগিয়ে দেন। ৩৪ মিনিটে ক্রিস্টিয়ানো টেলোর সহযোগিতায় জোয়াকুইন ব্যবধান দ্বিগুন করলেও বার্সা শিবির হতাশায় ডোবে। বিরতির পর আর্থার মেলোর স্থানে আরটুরো ভিডাল মাঠে নামনে। ৬৮ মিনিটে স্পট কিক থেকে মেসি এক গোল পরিশোধ করেন। কিন্তু তিন মিনিট পরেই লো সেলসো শট আটকাশে পারেনি মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান। যদিও এরপর থেমে থাকেনি বার্সা। ৭৯ মিনিটে মুনির আল হাডাডির সহায়তায় ভিডাল দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোল করেন। ৮১ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে ইভান রাকিটিচ মাঠ ত্যাগ করলে বার্সেলোনা ১০ জনের দলে পরিনত হয়। ৮৩ মিনিটে জুনিয়রের ক্রস থেকে সার্জিও কানালেস বেটিসতে চতুর্থ গোল উপহার দিলে বার্সার আর ফিরে আসার কোন সুযোগ ছিল না। ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে মেসির গোল ব্যবধানই শুধু কমিয়েছে।
মাদ্রিদের পক্ষে ২৩ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন করিম বেনজেমা। ৫৬ মিনিটে গুস্তাভো কাবারালের আত্মঘাতি গোলে ব্যবধান দ্বিগুন হয়। ৬১ মিনিটে হুগোর মালো সেল্টার পক্ষে এক গোল করলে খেলায় কিছুটা উত্তেজনা বাড়ে। ৮৩ মিনিটে সার্জিও রামোসের পেনাল্টিতে রিয়ালের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে ডানি সেবালোস দুর পাল্লার শটে মাদ্রিদকে চতুর্থ গোল উপহার দেন। এরপর ইনজুরি টাইমে চতুর্থ মিনিটে ব্রেইস মেনডেজ সেল্টার পক্ষে সান্তনাসূচক এক গোল করেছেন।