শিশু মৃত্যু রোধে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য

991

ঢাকা, ১২ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। সুতরাং সুন্দর ভবিষ্যতে জন্য প্রতিটি শিশুর সুরক্ষা দরকার। আর সে কারণেই বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব শিশু সুরক্ষা তথা শিশু মৃত্যু রোধে কাজ করছে। শিশু মৃত্যু রোধে এসেছে দারুন সাফল্য। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য অভাবনীয়। তবে শিশু মৃত্যুর কিছু কারণ আছে যেগুলো নিয়ে আলোচনা দরকার। শিশু মৃত্যুর কিছু কারণ অবশ্যই আছে যা আলোচনা করা দরকার। যেমন সাগর আর ইয়াসমিনের বিয়ের বয়স মাত্র দেড় বছর। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঘর আলো করে আসে তাদের প্রথম ছেলে সন্তান। প্রথম সন্তান ছেলে হওয়ায় বাড়ির সবাই খুব খুশি। ঢাকার মালিবাগের এক ক্লিনিকে ইয়াসমিনের সন্তান হয়। সন্তান হওয়ার তিন দিন পরই তারা চলে আসে বাসায়। কয়েকদিন খুব ভালই চলছিল। কাছের-দূরের অনেক আত্মীয় দেখতে আসেন মা-ছেলেকে। কিন্তু ১৫ দিন পার না হতেই ছেলে অসুস্থ হয়ে যায়। দুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়ে শুধু কান্না শুরু করে। পরদিন ছেলেকে নিয়ে আবার সেই ক্লিনিকে গেলে ডাক্তার বলেন, ছেলের ইনফেকশন হয়েছে। সাথে নিউমোনিয়া। সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। মাত্র পনের দিনের শিশুটি দু’দিন যুদ্ধ করে হার মানে মৃত্যুর কাছে।
রহিম আর মাজেদার দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার। নগরীর মোহাম্মদপুর এলকার এক বস্তিতে থাকা এই পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও সুখের কোন অভাব ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের এই সুখের জীবনে নেমে আসে চরম দুঃখ। ছোট ছেলে আফজাল যার বয়স মাত্র চার বছর। গত ৩ অক্টোবর বাড়ীর পার্শ্ববর্তী এক ডোবায় পড়ে সে মারা যায়। বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে পা পিছলে সে ডোবায় পড়ে।
সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে শূন্য হতে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হার ছিল ১০০০ জীবিত শিশুর মধ্যে ২৮.২ শতাংশ। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে প্রতি ১০০০ জীবিত শিশুর মধ্যে ১৪৪ জন মারা যেত। ২০১৫ সালে তা নেমে আসে ৩৮ জনে। অর্থাৎ ১০০০ জন জীবিত শিশুর মধ্যে ৩৮ জন মারা যেত। একই সময় বিশ্বেও তা নেমে আসে ৫৩ শতাংশে। তবে এখনো পর্যন্ত বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ১৬০০০ শিশু মারা যায়।
ইউনিসেফের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত পঁচিশ বছরে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যু হার ৭৩ শতাংশ কমেছে। ১৯৯০ সালে শিশু মৃত্যু ছিল ৫,৩২,০০০। ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখে। তবে এ সংখ্যার অধিকাংশই নবজাতক যাদের বয়স মাত্র এক মাসের মধ্যে।
ওই গবেষণা মতে মৃত্যু হওয়া অনুর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী এসব শিশুর অর্ধেকই মারা যায় অপুষ্টির কারণে। এছাড়াও রয়েছে নিউমোনিয়া, জন্মকালীন জটিলতা, সংক্রমনজনিত রোগ অথবা ডায়রিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে এসব রোগের অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য যদি তা সঠিক সময়ে নির্ধারণ এবং তার চিকিৎসা শুরু করা যায়।
অন্যদিকে পাঁচ বছরের উর্দ্ধে যেসব শিশুর মৃত্যু হয় তার অধিকাংশই হয় পানিতে ডুবে, সড়ক দুর্ঘটনা অথবা আঘাতজনিত কারণে।
এদিকে বর্তমান সরকার দেশে নবজাতক এবং শিশুদের মৃত্যু হার কমাতে এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের রেজিষ্ট্রার এবং শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে নবজাতক ক্যাম্পেইন অন্যতম। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সরকার সেবাটি সাধারন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব কারণে শিশুদের মৃত্যু হয় তার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। তবে এজন্য দরকার সবার সচেতনতা। শিশুরা সাধারণত তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। আর তাই অভিভাবকদের উচিত তাদের শিশুদের প্রতি মনযোগ বাড়ানো। কোন সমস্যা মনে হলেই তারা যেন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
তিনি বলেন, বিশুদ্ধ পানি ও মৌলিক সাস্থ্যসেবার অভাব এবং অপুষ্টির কারণে প্রতি বছর কয়েক লাখ শিশু মারা যায়। আর এ কারণে জন্মের কয়েক বছর পর্যন্ত আমা সকল অভিভাবককে শিশুদের প্রতি সচেতন থাকতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মনির হোসেন বলেন, শিশুরা খুবই স্পর্শকাতর। যার ফলে তাদের সংক্রমনজনিত রোগ হয় বেশি। আর এই রোগেই বাংলাদেশে প্রতি বছর অনেক শিশু মারা যায়। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, নবজাতক শিশুদের দেখতে এসে তাদের আত্মীয়-স্বজন সবাই কোলে নিয়ে আদর করেন। এরফলে বাইরে থেকে যে তার সাথে বয়ে আসা জীবাণু সহজে নবজাতক শিশুকে আক্রমণ করতে পারে।
এজন্য নবজাতক শিশুকে কোলে নেয়ার আগে হাত ভালো করে ধুয়ে এবং পরিষ্কার কাপড় পরে নেয়ার পরামর্শ দেন ডা. হোসেন।