১১ নভেম্বর ১৪ শহীদের রক্তে লাল হয়েছিল বগুড়ার বাবুরপুকুর পাড়

431

বগুড়া, ১০ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : কাল রোববার বাবুরপুকুর দিবস। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৪ জনকে টেনে হেচড়ে নিয়ে যায় শাজাহানপুর উপজেলার বাবুরপুকুর নামকস্থানে। সেখানে এই ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।
সেই ১৪ জন শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ। সেই স্মৃতি সৌধে শহীদদের স্মরণ করবে শহীদ পরিবারের সদস্য ও বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার কিছু তরুণ ও যুবককে সংগঠিত করেন মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ও তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মান্নান পশারী। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে থাকে। এদিকে মে মাসেই ওই একই এলাকায় গঠন করা হয় শান্তি কমিটি। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায় ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস, অনেকে যুদ্ধের মাঠ থেকে বাড়ি এসেছেন স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। ১১ নভেম্বর আর রমজানের ২১ তারিখ শেষ রাতে সকলে যখন সেহরী খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সেই সময় শান্তি কমিটির সহযোগিতায় হানাদার বাহিনীরা হানা দেয় ঠনঠনিয়ার শাহ পাড়া, মন্ডলপাড়া, তেঁতুলতলা, হাজীপাড়া ও পশারীপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায়। হানাদার বাহিনী এসব এলাকার বাড়ি থেকে টেনে হেচড়ে বের করে আনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মান্নান পশারী ও তার ভাই হান্নান পশারী, ন্যাপ কর্মী ওয়াজেদুর রহমান টুকু, জালাল মন্ডল ও তার ভাই মন্টু মন্ডল, আব্দুস সবুর ওরফে ভোলা মন্ডল, মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম, আলতাফ আলী, বাদশা শেখ, বাচ্চু শেখ, ফজলুল হক খান, টিএন্ডটির অপারেটর নূর জাহান, আবুল হোসেন ও তার পিতা গেদু জিলাদার, ছোটভাই আশরাফ আলী, জনাব আলী ও তার পুত্র জাহাঙ্গীর খন্দকার, সিবের আলীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩ জনকে।
হানাদার বাহিনী ২১ জনকে বাড়ি থেকে বের করেই হাত ও চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নেয়। শত কাকুতি-মিনতি কিছুই থামাতে পারেনি হানাদারদের। গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের পাশে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বাবুরপুকুরে। সঙ্গে ছিল শান্তি কমিটির নেতা। সেই নেতাই আটকৃকতদের মধ্য থেকে ১৪ জনকে সনাক্ত করে দেয়। তার সনাক্ত করা টিএন্ডটির মহিলা অপারেটর নূর জাহানসহ ১৪ জনকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। বাকি ৭ জনকে সেখান থেকে ছেড়ে দেয় হানাদাররা।
সেই দিন যারা পাক বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল তারা হলেন শহীদ আবুলের পিতা গেদু জিলাদার ও ছোট ভাই আশরাফ আলী, জনাব আলী ও তার পুত্র জাহাঙ্গীর খন্দকার, সাবের আলী এবং অজ্ঞাত ২ জন। সেখানে হত্যাযজ্ঞের পর লাশ সারিবদ্ধ ভাবে সেখানে ফেলে রাখা হয়। প্রাণে বেঁচে আসা ৭ জনের কাছে খবর পেয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা বাবুরপুকুরে ছুটে যায় লাশের সন্ধানে। কিন্তু সেখান থেকে লাশ আর আনতে পারেনি। সেখানেই কবর দেওয়া হয় ১৪ শহীদের।
এই গণকবরস্থলে কোন সমাধি ছিল না। পরে ১৯৭৯ সালে বগুড়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সেখানকার কবরগুলো পাকা করে দেওয়া হয়।
২০০৯ সালের মাঝামাঝিতে সেখানে স্মৃতিসৌধ স্থাপন করার কাজ শুরু হয়। বগুড়া জেলা পরিষদ এই প্রকল্পের অর্থায়ন করে।
বেদনা বিধুর এই দিনটিকে স্মরণ করতে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং বগুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মীরা সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
রোববার অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদদের আত্মার শান্তিকামনা করা। সম্মিলিত সাংস্কৃািতক জোট বগুড়া ও গ্রাম থিয়েটারের আয়োজনে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হবে বলে জানান জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না।