ইউরিন ইনফেকশনের জন্য ‘ই-কোলাই’ নামের ব্যাকটেরিয়া প্রধান দায়ী

655

ঢাকা, ১০ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : বাংলাদেশে পুরুষ এবং মহিলাদের ইউরিনে ইনফেকশন পরিচিত একটি সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিন ইনফেকশনের জন্য মূলত ‘ই-কোলাই’ নামের ব্যাকটেরিয়া প্রধান দায়ী। পুরুষের তুলনায় নারীরাই এই অসুখে ভুগেন বেশি। কারণ, নারীরা ঘরের বাইরে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মূত্র ত্যাগও করেন না। এছাড়াও অধিকাংশ নারী এ বিষয়ে সচেতন নন। যার ফলে ইউরিন ইনফেকশনে নারীদের সংখ্যাই বেশি।
সতের বছর বয়সী তমা দত্ত বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কমার্স কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। কলেজে শুরুর দিকে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভালই কাটছিল। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা হচ্ছে। যার ফলে কোন কিছুই তার ভালো লাগছে না। এমনকি কলেজেও তার আসতে ইচ্ছে করে না এখন। কিন্তু তার এ সমস্যার কথাটিও লজ্জায় সে শেয়ার করতে পারছে না কারো সঙ্গেই। মাকে কয়েকবার বলতে গিয়েও সে বলতে পারেনি। পরে সহ্য করতে না পেরে মাকে বলেই ফেলে তার শারীরিক সমস্যার কথাটি।
মা শুনে প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও পরে নিজেকে সামলে নেন। সেদিন সন্ধ্যায়ই তিনি তমাকে নিয়ে চলে যান এক গাইনোকোলজিস্টের কাছে। পরে কিছু টেস্টের পর জানা যায়, তমার ইউরিন ইনফেকশন। সেই চিকিৎসক তমাকে কিছুও ওষুধ লিখে দেন। সঙ্গে কয়েকটি পরামর্শ। এখন তমা সুস্থ। কলেজেও যাচ্ছেন নিয়মিত।
সুমনা হক। বয়স ৩৩। চাকরি করেন ছোট এক প্রাইভেট ফার্মে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত ডিউটি। কিন্তু প্রায় দিনই তার অফিস থেকে বের হতে-হতে ৬.৩০টা হয়ে যায়। আর এই দীর্ঘ সময়ে সে বাথরুমে যায় মাত্র একবার। কারণ অফিসের বাথরুমটি অতটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। যার ফলে তার ওই বাথরুমে যেতে ইচ্ছে করে না। এই কারণে সুমনা পানিও কম পান করেন। এভাবে আস্তে আস্তে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর বিভিন্ন টেস্টের পর জানা যায় সুমনার ইউরিন ইনফেকশন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের অবস এন্ড গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, বাংলাদেশে পুরুষ এবং মহিলাদের ইউরিনে ইনফেকশন পরিচিত একটি সমস্যা। মূলত গরমের সময়ে এ সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, পুরুষের তুলনায় নারীরাই এই অসুখে ভুগেন বেশি। কারণ নারীরা ঘরের বাইরে থাকলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মূত্র ত্যাগ করেন না। এছাড়াও অধিকাংশ নারীরা এ বিষয়ে সচেতন নন। যার ফলে ইউরিন ইনফেকশনে নারীদের সংখ্যাই বেশি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় মূত্র ত্যাগ না করা ছাড়াও জননতন্ত্রের ইনফেকশন, পানি কম পান করা, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকাও ইউরিন ইনফেকশনের জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, এই ইউরিন ইনফেকশনের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন- মূত্রের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, মূত্রে দুর্গন্ধ থাকা, হঠাৎ হঠাৎ জ্বর চলে আসা, মূত্র ত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া, তলপেটে অথবা কোমরের দুই পাশে ব্যথা অথবা প্রায়ই সময় বমি-বমি ভাব থাকা।
ডা. রোকেয়া বলেন, এই ইউরিন ইনফেকশন হতে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই ঘুমানোর আগে মূত্র ত্যাগ করতে হবে। এছাড়াও প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি এবং ফলমূল খেতে হবে। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং নিয়মিত স্নান  করতে হবে। বাসস্থান এবং বাথরুম নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে যাতে করে স্যাঁতস্যাঁতে না হয়। এছাড়াও পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, মূলত ‘ই-কোলাই’ নামের ব্যাকটেরিয়া ইউরিন ইনফেকশনের জন্য প্রধান দায়ী। সঠিক সময়ে মূত্র ত্যাগ না করে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখলে, ‘ই-কোলাই’ দ্রুত আক্রমণ করে। আর এই ব্যাকটেরিয়া থাকে পাকস্থলী এবং খাদ্যনালীতে। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে গেলে এই ব্যাকটেরিয়া জননতন্ত্রে বাসা বাঁধতে পারে।
এছাড়া, অস্ত্রোপচারের পরে অনেক রোগীকে ক্যাথেটার (মূত্র নির্গমনের জন্য দেয়া বিশেষ ধরনের নল) দেয়া থাকে। ক্যাথেটার দীর্ঘদিন থাকলে এবং সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলেও ইউরিনে ইনফেকশন হয়। এসব ছাড়াও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বসবাস, অতিরিক্ত নোংরা টয়লেট ব্যবহার করা বা নিয়মিত গোসল না করার ফলে ইউরিনে ইনফেকশন হতে পারে।