শরীয়তপুরে বাড়ছে বিনা চাষে পেঁয়াজ-রসুন আবাদ

914

শরীয়তপুর, ৯ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কৃষক এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিনা চাষে পেঁয়াজ-রসুন আবাদে। বেলেযুক্ত দোআঁশ মাটি বিনা চাষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ-রসুন আবাদের জন্য উপযোগী। তবে শরীয়তপুরে চাষ ও বিনা চাষ দুই পদ্ধতিতেই পেঁয়াজ-রসুন আবাদ হয়।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত ৪-৫ বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে বিনা চাষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ রসুন আবাদ। তবে বিনা চাষ পদ্ধতিতে চাষ পদ্ধতির চেয়ে বিঘা প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা বেশী লাভ হওয়ায় দিনে দিনে বাড়ছে এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ রসুন আবাদ। বিনা চাষ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ কম, ফলন ভালো ও আগাম ফলন পাওয়ায় দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ভাল ফলনের আশা করছেন শরীয়তপুরের পেঁয়াজ-রসুন চাষীরা।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবছর শরীয়তপুরে ৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও ২ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ১২ মেট্টিক টন ও রসুনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ১৭০ মেট্টিক টন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও বেশী পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ রসুন আবাদ হবে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষক ও স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
অক্টোবর মাসের শেষ দিকে আবাদ শুরু হয়ে নভেম্বরের মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে রোপণের কাজ শেষ হয়ে যায়। চাষ পদ্ধতি ও বিনা চাষ পদ্ধতিতে কৃষকরা পেঁয়াজ ও রসুন আবাদ করে থাকেন। তুলনামূলক একটু নিচু ও ভেজা জমিতে বিনা চাষ পদ্ধতিতে চাষ করলে চাষ খরচ কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম, ভালো ফলন ও একটু আগাম ফলন পাওয়ায় বাজারমূল্যও একটু বেশী পাওয়ায় যায়। রোপণের ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে কৃষক রসুন তাদের ঘরে তুলতে পারেন।
জাজিরা উপজেলার বড়কৃষ্ণ নগর, পশ্চিম নাও ডোবা, পূর্ব নাওডোবা, সেনেরেচর, বড় কান্দি, বড় গোপালপুর, মূলনা, জাজিরা, জয়নগর ও পালের চর ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশী পেঁয়াজ রসুন উৎপাদন করা হয়। উপজেলার বিলাসপুর ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নে তুলনামূলক কম আবাদ হয়। নড়িয়া উপজেলার রাজনগর, মোক্তারেরচর, নশাসন, জপসা, ভোজেশ্বর ও ফতেহজঙ্গপুর ইউনিয়নে সদর উপজেলার চন্দ্রপুর, চিকন্দী, শৌলপাড়া, ডোমসার ও বিনোদপুর ইউনিয়নে, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর, ইসলামপুর, ধানকাঠি, সিধলকুড়া ও পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নে, গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া, সামন্তসার, ইদিলপুর, নলমুরি, কুচাইপট্টি, ও গোসাইরহাট ইউনিয়নে এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও, রামভদ্রপুর, ডিএম খালি’ চরভাগা, তারাবুনিয়া ও সখিপুর ইউনিয়নে পেঁয়াজ- রসুনের প্রচুর আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে জাজিরা উপজেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরি ফসলই হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন।
নড়িয়া উপজেলার মালতকান্দি গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন মাল বলেন, এ বছর পেঁয়াজ-রসুন আবাদে চাষ পদ্ধতিতে বিঘাপ্রতি ৪০-৪৫ হাজার টাকা ও বিনা চাষ পদ্ধতিতে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে ভালো ফলন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদি। গত মৌসুমে চাষ পদ্ধতিতে বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ মণ ও বিনা চাষ পদ্ধতিতে ৪৫-৫০ মণ রসুন এবং বিনা চাষ পদ্ধতিতে ৫৫-৬০ মণ ও চাষ পদ্ধতিতে ৫০-৫৫ মণ পেঁয়াজের ফলন পেয়েছিলাম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের উপ পরিচালক মো. রিফাতুল হোসাইন বলেন, এ বছর পেঁয়াজ-রসুন আবাদের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। জেলার কৃষকরা চাষ ও বিনা চাষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ রসুন আবাদ করে থাকেন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫০ ভাগ জমিতে বিনা চাষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ রসুন আবাদ হচ্ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের যেসকল জমিতে পলিযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটিতে উপযুক্ত রস বিদ্যমান। তাছাড়া মাটির রস সংরক্ষণের জন্য কৃষকরা কচুরীপানা ও ধানের খড় মালচিং হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। বিনা চাষ পদ্ধতিতে আবাদ খরচ কম হওয়ায় এবং আগাম ফলন পাওয়ায় কৃষকরা দামও একটু বেশী পাচ্ছেন। ফলে বিনা চাষ পদ্ধতিতে আবাদ উপযোগী জমিতে অধিকাংশ কৃষকই এই পদ্ধতিতে আবাদ করছেন। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারাও সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন ।