উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

320

ঢাকা, ১৫ মে, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এটা করেছে এবং আমরা আশা করি অন্যান্য দেশও আমাদের অনুসরণ করবে।’
তাঁর সরকারের বিভিন্ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
তিনি সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রতিবন্ধিতা ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক ২য় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তকরণে এ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক, আঞ্চলিক, জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
পারস্পরিক অর্জন ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক, আঞ্চলিক পরিকল্পনা এবং ‘ঢাকা ঘোষণা ২০১৫’-এর কর্মপন্থা অন্তর্ভুক্ত করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে এ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল স্বাগতিক বক্তৃতা করেন।
রয়্যাল থাই সংসদের সদস্য এবং ইউএন’র ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন রাইটস অব দ্যা পারসন্স উইথ ডিজ্যাবিলিটিজ’র সদস্য মনথিয়ান বুন্তান সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।
দুর্যোগের শিকার ও সেলফ হেল্প গ্রুপ অব দ্যা পারসন্স উইথ ডিজ্যাবিলিটিজ সভাপতি এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কাজল রেখাও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মইয়া সেপো জাতিসংঘ মহাসচিবের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস (ইউএনআইএসডিআর) বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি মামি মিজোরির পাঠানো বিশেষ প্রশংসা পত্র অনুষ্ঠানে পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে একটি ভিডিও উপস্থাপনা প্রদর্শিত হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফোকাল পয়েন্ট, অ্যাডভাইজরী গ্রুপ অন ডিআইডিআরএম, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিইএইচও) অটিজম বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, প্রায় ৩৩টি দেশের ১শ’ জনের বেশি সদস্য, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ সম্মেলনে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে এবং এতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং সম্পদ ও মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশ যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রস্তুত করেছিলেন। যা ছিল বিশ্বব্যাপী জনসম্পৃক্ত দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচিগুলোর মধ্যে প্রথম উদ্যোগ।
‘আমরা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও এখন সিপিপি মডেল অনুসরণ ও সম্প্রসারণ করছি। দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রমের পরিবর্তে আমরা টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করেছি। যা আমাদের সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্যারিস চুক্তি-২০১৫ এর মত আন্তর্জাতিক নীতি কাঠামোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করেছে,’ বলেন তিনি।
২০৩০ সালের মধ্যে তাঁর সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে লক্ষ্যে আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ দেশের সকল মানুষকে উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ঝুঁকি অবহিতকরণ উন্নয়ন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্তকরণ এবং দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশনাল সেন্টার স্থাপন এবং দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে গত সাড়ে ৯ বছরে সারাদেশে ৪ হাজার ৮৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ২৫৫টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ৬৬টি ত্রাণ গুদাম নির্মাণের কাজ চলছে।
আপদকালিন খাদ্য মজুদে সরকারের পারিবারিক সাইলো বিতরনের কর্মসূচির উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে খাদ্যাভাব মেটাতে দুর্যোগপ্রবণ ১৯টি জেলার ৬৩টি উপজেলার ৫ লাখ পরিবারের মধ্যে ৫৬ কেজি চাউল বা ৪০ কেজি ধান ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি করে ফুডগ্রেড প্লাস্টিকের তৈরি পারিবারিক সাইলো বিতরণ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ১০৯০ নম্বরে টোল ফি আইভিআর পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য সরকার ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ এবং ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সাড়াদান কৌশলে প্রতিবন্ধিতা বিষয়কে অন্তর্ভুক্তির জন্য দুর্যোগ বিষয়ক বৈশ্বিক প্লাটফর্মে প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই সম্মেলন হতে প্রাপ্ত অর্জন ও অভিজ্ঞতা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন ও জীবিকা উন্নয়নে এবং দুর্যোগ সহনশীলতা শক্তিশালী করতে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা গ্রহণে সহায়তা করবে।
ইন্টারন্যাশনাল ফোকাল পয়েন্ট, অ্যাডভাইজরী গ্রুপ অন ডিআইডিআরএম, বাংলাদেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিই এইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অটিজম বিষয়ক গুডউইল অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ হোসেনকে প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়টিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে গুরুত্বপূর্ণভাবে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ সম্মেলন সকল দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং এরপর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শনীর তিনদিনের এক মেলার উদ্বোধন করে এর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।