প্রান্তিক উদ্যোক্তা নারী

628

॥ এফ রহমান রূপক ॥
ঢাকা, ৭ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : শরিয়তপুরের মাজেদা এখন স্বাবলম্বী। দুই সন্তান, বৃদ্ধা শাশুড়ী ও স্বামী নিয়ে তার সংসার। এক সময় স্বামীর আয়ে তাদের সংসার চলত খুবই কষ্টে। মাঝে মধ্যে তাই ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হতো। মাজেদা অশিক্ষিত। লেখাপড়ার হাতে খড়ি নেই। এতো কষ্ট আর সইতে না পেরে মাজেদা বাড়ী থেকে বাবার বাড়ী চলে যেতেন। একদিন মহিলা অধিদপ্তরের সন্ধান মেলে তার। এলাকার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে সেখানে দর্জি বিজ্ঞানে ভর্তি হয়ে মাজেদা সেলাইয়ের কাজ শিখেন। স্বপ্ন দেখেন সেলাইয়ের কাজ করে বাচ্চাদের মানুষ করবেন। আনবেন সংসারে স্বচ্ছলতা। কিছুদিনের মধ্যে সেলাইয়ের শিখে নিয়েছেন মাজেদা। সেলাই মেশিন কেনার মতো সামর্থ তার ছিল না কারন, স্বামী দিন মজুর। দিনে যা আয় করে তাতে তার খাওয়া দাওয়া চলে কোন মতে। মাজেদা একটি এনজিওর সহায়তা নেন। এনজিওর মাধ্যমে দুস্থ মহিলা উন্নয়ন তহবিলে আবেদন করে তিনি পান একটি সেলাই মেশিন। ঝিয়ের কাজ করে জমানো টাকা এবং কিছু টাকা এনজিও থেকে ঋণ নেন। শরীয়তপুর জেলার কোটপাড়া মোড়ে একটি দর্জির দোকান দেন তিনি। প্রায় এক বছর ধরে তিনি সেখানে দর্জির কাজ করে আসছেন। এলাকার অনেক পরিবারের লোক এখন মাজেদার নিয়মিত কাস্টমার। দোকান থেকে প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে এখন বেশ ভালো কাটছে তাদের সংসার। অশান্তি দূর হয়ে মিলেছে সুখের ছোঁয়া । পৈতৃক থেকে একখন্ড জমিতেই তাদের বাস। দোচালা টিনের ঘরটি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে সেখানে পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। সন্তানরাও লেখাপড়ায় ভালো মনোযোগ।
সুমি আক্তার। শরীয়তপুর সরকারি কলেজের বাংলায় অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। পাশাপাশি শহরে দুই বছর যাবত তিনি একটি বিউটি পার্লারের প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। যার নাম ‘সাজ বিউটি পার্লার’। শরীয়তপুর শহরের ধানুকা এলাকায় তার বাড়ী। পড়ালেখার ফাঁকে চলে তার পার্লারের কাজ। তিনি জানান, ‘আমার স্বপ্ন একটি আধুনিক পার্লার প্রতিষ্ঠা করা। আমি মহিলা অধিদপ্তর থেকে পার্লারের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। বাবা-মাসহ বাড়ির সবাই আমার এ কাজে উৎসাহ দিয়েছেন। পার্লারের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও বাবা কিনে দিয়েছেন। পড়ালেখার কারণে সার্বক্ষণিক পার্লারে সময় দিতে পারি না। তারপরও পার্লার থেকে মাসে দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা আয় হয়।’ সুমি আক্তারের মাস্টার্স শেষ করার পরিকল্পনা আছে। সে কোন চাকরির পেছনে ছুটতে চায় না। সে চায় পার্লারের মাধ্যমেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, পার্লার ব্যবসায় অনেক খরচ। এ বিষয়ে সরকার ঋণের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। পার্লারকে ক্ষদ্র কুটির শিল্প হিসেবেই দেখা উচিত। তাহলে অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে এ ব্যবসায়।
শরীয়তপুর মহিলা অধিদপ্তর দীর্ঘদিন যাবত ‘জীবিকায়নের জন্য মহিলাদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ’ চালু করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় দর্জি বিজ্ঞান, এমব্রয়ডারি ও সূচি শিল্প, ঠোঙা তৈরি, বিউটিফিকেশন, ব্লক-বাটিক-পি্িরন্টং এই পাঁচটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কোর্সের মেয়াদ তিন মাস। প্রতি কোর্সে ৫০ জন নারী অংশ নিতে পারেন। মহিলা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক মোছা. আলেয়া বেগম জানান, এখানে শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ছোট, বড়, ধনী-গরীব সকল নারীরা মিলেমিশে প্রশিক্ষণ নেন। তবে ধনী পরিবারের নারীদের থেকে দরিদ্র নারীরাই বেশি।
পাশাপাশি প্রতি রোববার ও মঙ্গলবার জেলখানায় থাকা নারী হাজতী ও কয়েদিদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে । প্রশিক্ষক আসমা খাতুন জানান, সেখানকার নারীরাও প্রশিক্ষণ শেষে অবৈধকর্ম ত্যাগ করে বৈধভাবে আয় করতে আগ্রহী। তবে তাদের বেশির ভাগ নারী ঋণ সহযোগিতার দাবি করেন।
দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারীদের উন্নয়নে অংশীদার হতে হবে । এ সকল প্রান্তিক নারীদের উদ্যোগে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। তাদের অনুসরণ করে স্বাবলম্বী হবে আরও লাখো নারী ।