ঢাকা, ৬ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আন্দোলনের নামে দেশে নাশকতামূলক কর্মকান্ড এবং সহিংসতা চালালে কঠোর হস্তে তা দমন করা হবে।
আজ রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংলাপ থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্দোলনের নামে আপনারা দেশে নাশকতা ও সহিংসতা চালাবেন আর আমরা ঘরে বসে বসে ডুগডুগি বাজাবো এটা মনে করবেন না।’
আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কিছু নেতার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা সমাবেশে লম্বা লম্বা কথা বলেছেন আমরা তাদের সম্পর্কে সবকিছুই জানি।’
ওবায়দুল কাদের সংযতভাবে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি কোন বক্তব্য ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে চলে যায়, তার ফলাফল গণতন্ত্রের জন্য শুভ হবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে অশ্লীল ও অশোভন বক্তব্যের সূচনা হয়েছে। জনগণের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধি পেলে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠবে।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের (এলডিএ) সঙ্গে সংলাপের ফলাফল প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার আদর্শ ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বের প্রশ্নে বাম দলগুলোর মতামত অভিন্ন। তবে কিছু কিছু বিষয় আমাদের সঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভব বলে এলডিএ নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেছেন। তবে এতে কিছু সমস্যা রয়েছে, যার সমাধান সাংবিধানিকভাবে করা যেতে পারে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে তাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং পরিস্কারভাবে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা তাদের সকল বক্তব্য শুনেছি এবং আগামীকালও যারা বক্তব্য দেবেন তাদের কথাও শুনবো।
এর আগে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এলডিএ নেতৃবৃন্দ বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার, একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিরোধী দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার এবং সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এলডিএ আহ্বায়ক ও সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে এবং সবকিছুই নির্ভর করছে তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর। আমরা নির্বাচনে যোগ দিতে প্রস্তুত।
এলডিএ সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে তারা তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর তারা পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। আগামী বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের কথা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এলডিএ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় এবং সেজন্যই তারা সংলাপে যোগ দিয়েছেন।
সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই জোটের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
সংলাপে ১৪ দলীয় জোটের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অপরদিকে এলডিএ’র ১৬ সদস্যে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
৮টি বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত এলডিএতে রয়েছে- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।