১৪ দল-যুক্তফ্রন্ট সংলাপ গঠনমূলক ও ইতিবাচক : কাদের

485

ঢাকা, ২ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৪ দলীয় জোট ও ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের মধ্যেকার আজকের সংলাপকে ‘গঠনমূলক ও ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তফ্রন্টের অনেকগুলো দাবি মেনে নিয়েছেন।
তিনি আজ রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের আলোচনা শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই জোটের মধ্যে গঠনমূলক ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৈর্য সহকারে যুক্তফ্রন্ট নেতাদের বক্তব্য শোনেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ, গঠনমূলক ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আলোচনা খুবই ইতিবাচক মনে হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তারা অত্যন্ত ইতিবাচক ও গঠনমূলক। আমরা মনে করি তারা নির্বাচনে আসবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, উভয় পক্ষের আলোচনার মধ্যে একটি মিল ছিল। মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বিষয়ে কোন ভিন্ন সুর ছিল না। তাদের প্রতিনিধিদলে একজন ছাড়া সবাই বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের পক্ষে দু’জন সিনিয়র নেতা বক্তব্য দিয়েছেন। পুরোটা সময়ই যুক্তফ্রন্টের নেতারা ডমিনেট করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের অনেকগুলো দাবি মেনে নিয়েছেন। তারা নির্বাচনে লেভেল প্লেইয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, না হয় সংসদ নিষ্ক্রিয় করার দাবি জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের পর ইতোমধ্যে সংসদ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সবাইকে স্ট্রিকলি নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। মন্ত্রীরা পতাকা ব্যবহার করতে পারবে না ও এমপিদের কার্যকারীতা থাকবে না। এজন্য একনেকে এতগুলো প্রকল্প পাস হচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যাস্ত করার দাবি করেছেন। এছাড়া এমপিরা যাতে নির্বাচনের সময় কোন কিছুর উদ্বোধন করতে না পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও তারা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের এ দাবিও মেনে নিয়েছেন। কারণ নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী বিলবোর্ড, পোস্টারসহ সকল বিষয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে চলে যায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, নির্বাচনে সকল প্রকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের ক্ষমতা সীমিত করার দাবিও মেনে নেয়া হয়েছে।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনে যুক্তফ্রন্টের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে অতীতে অনেক খেলা ও অপকর্ম হয়েছে। সেনাবাহিনী তাদের ভূমিকার জন্য সারাবিশ্বে প্রশংসিত। দেশের সংকটে দুর্যোগে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই তাদের যত্রতত্র ব্যবহার করা যাবে না। তারা নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে তারা কাজ করবে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে পার্লামেন্টে আইন পাস হয়নি। রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছেন। সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন চিন্তা করতে পারে।
তিনি বলেন, যুক্তফ্রন্ট নেতাদের অনুরোধে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনা করবেন বলে তাদের জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারে যুক্তফ্রন্টের দাবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক কারণে কোন মামলা হয়ে থাকলে তার একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা তাদের তালিকা দিলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সে তালিকা দেবেন। আমাদের নেত্রী তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে তাদের জানিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করতে হয় এমন মেজর কোন দাবি তারা জানাননি। তারা সরকার পরিবর্তন বা নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য কোন জোর দাবিও জানাননি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে, যুক্তফ্রন্ট আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে।
সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে আলোচনা শুরু হয়ে প্রায় দুই ঘন্টা স্থায়ী হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী তার জোটের ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদের, দলের নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, আনিসুল হক, আবদুল মতিন খসরু, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, মাহবুব উল হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ড. হাসান মাহমুদ এবং স ম রেজাউল করিম আলোচনায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ বড়–য়া এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা মাইনুদ্দিন খান বাদল ক্ষমতাসীন জোটের অংশীদার হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন।
যুক্তফ্রন্টের অন্য সদস্যরা হলেন- বিকল্পধারার সভাপতিমন্ডলির সদস্য শমশের মবিন চৌধুরী ও গোলাম সারওয়ার মিলন, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) সভাপতি নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি জেবেল রহমান গনি, মহাসচিব মো. গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোস্তফা এবং বাংলাদেশ জনতা পার্টির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এটি দ্বিতীয় সংলাপ। এর আগে, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের সংলাপ হয়।