জেল আপিল মামলা নিষ্পত্তিতে একাধিক বেঞ্চ গঠন বিবেচনা করা হবে : প্রধান বিচারপতি

701

ঢাকা, ১২ মে, ২০১৮ (বাসস) : প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, জেল আপিল মামলা নিষ্পত্তির জন্য পৃথক একাধিক বেঞ্চ গঠন করা যায় কিনা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।
তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় সাজার হার মাত্র ৩ শতাংশ বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব মামলায় কেন সাজার হার কম, তা খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি বলেন, এসব মামলায় সাজা কম হওয়ার কারণে হতাশ হলে হবে না। কারণ ওয়ার্কশপ করলে এর কারণ বের করা সম্ভব। এজন্য একটি কর্মশালা করাও প্রয়োজন।
আজ শনিবার সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে ‘উচ্চ আদালতে সরকারি আইনি সেবা : বিচার প্রার্থীগণের প্রত্যাশা ও জেল আপিল মামলা পরিচালনায় আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সুপ্রিমকোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার পরিচালক মো. জাফরোল হাসান, উপ-কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনাম প্রমুখ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, দরিদ্রবান্ধব ও জনকল্যাণকর বিচার ব্যবস্থার অন্যতম শক্তি লিগ্যাল এইড। আইনের দৃষ্টিতে সমতা আইনগত সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইনগত সহায়তা পাওয়া অস্বচ্ছল মানুষের অধিকার, যা রাষ্ট্রের এক অপরিহার্য দায়িত্ব।
তিনি বলেন, অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদানে ২০০০ সালে প্রণীত আইনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এর ব্যাপ্তি তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছেছে। সময়ের প্রয়োজনে এ আইনটিও যুগোপযোগী করা হয়েছে। এর অধীনে নীতিমালা ও প্রোবিধানমালাও হালনাগাদ করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমি জেনে খুশী হয়েছি, বিগত নয় বছরে মোট ৩ লাখ ৫৯৮ ব্যাক্তিকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই সময়ে জেলা কমিটির মাধ্যমে ৮০ হাজার ৮৬৫টি দেওয়ানী, ফৌজদারী ও পারিবারিক মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। একইসময়ে সরকারি খরচে সুপ্রিম কোর্টে ১ হাজার ৮০৩টি জেল আপিল মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে সরকারি আইন সেবার মান উন্নয়নে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের আন্তরিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। মামলার শুনানিকালে বা বিচারের যে কোন স্তরে অসহায় নিঃস্ব মানুষকে আইনজীবীবিহীন পেলে তাকে আইনি সহায়তায় লিগ্যাল এইড অফিসে প্রেরণে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আগত জেলা জজগণের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, জেলখানার অভ্যন্তরে থাকা কারাবন্দীদের খোঁজ খবর নিন। তাদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবহিত হোন। অনিয়ম থাকলে কর্তৃপক্ষের নজরে আনুন। বিনা বিচারে আটক থাকলে তাদের আইনি সহায়তার উদ্যোগ নিন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি কারাগারের সঙ্গে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের নিবিড় যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়েও গুরুত্বরোপ করেন। তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামীর অর্থদন্ড পরিশোধ সহজীকরণ করতে সুপ্রিমকোর্ট থেকে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে তা সঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে লিগ্যাল এইড অফিসারগণ এবং জেল সুপারগণ মনিটরিং করবেন। তিনি বলেন, থানা থেকে আসামীকে কোর্টে হাজিরের সময় আসামীকে জিজ্ঞাসা করতে হবে আইনজীবী নিয়োগ করার সামর্থ আছে কিনা। আইনজীবী নিয়োগে অসমর্থ হলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনজীবী নিয়োগ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ধর্ষণ মামলায় সাজার পরিমাণ বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মামলা প্রমাণে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভিকটিমের মেডিকেল এভিডেন্স পাওয়া অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে মেডিকেল এভিডেন্স বা মেডিকেল রিপোর্ট পেতে দেরি হলে মামলা প্রমাণ করা দূরূহ হয়ে যায়। তাই ভিকটিমের দ্রুত মেডিকেল এভিডেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও যতœশীল হতে হবে।
সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, সুপ্রিমকোর্টের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। আইনে কী আছে সেটা বিচারপ্রার্থী জনগণ বুঝতে চায় না। তিনি বলেন, যারা হতদরিদ্র তারাই জেল আপিল করেন। কিন্তু অনেক জেল আপিল ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলো তালিকাভুক্ত হয় না। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পড়ে থাকে। এসব জেল আপিল যাতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাঠানো হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। তা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আমাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করা গেলেই এসব বিচার প্রার্থীদেরকে আইনি সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে।
মত বিনিময় সভায় বিভিন্ন জেলা ও দায়রা জজ, সিনিয়র জেল সুপার, প্যানেল আইনজীবীরা অংশ নেন।