বাসস দেশ-৩৬ : সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে পাল্টে গেছে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা

654

বাসস দেশ-৩৬
যোগাযোগ-পার্বত্য
সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে পাল্টে গেছে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা
॥ শহীদুল ইসলাম রানা ॥
ঢাকা, ৩০ অক্টোবর ২০১৮ (বাসস) : সরকার গত ১০ বছরে সড়ক যোগাযোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
খাগড়াছড়ির বাঘাই উপজেলার মাচালং এলাকার বাসিন্দা জুমচাষী অতুল চাকমা বাসসকে বলেন, ‘পাকা রাস্তা নির্মাণ এবং প্রচুর অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে আগের তুলনায় এখানকার মানুষের জীবন অনেক সহজ ও আরামদায়ক হয়েছে।’
পাহাড়ি এই ব্যক্তি বলেন, প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল ও সন্ত্রাস কবলিত এলাকা হওয়ায় আগে পার্বত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান ভ্রমণে পর্যটকেরা ভয় পেতেন। কিন্তু বর্তমানে দৃশ্যপট বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড গ্রহণ করায় এখানে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে।
অতুল চাকমা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকালে অন্যান্য কৃষকের সাথে কলা, আনারস, কমলালেবু, আম ও বিভিন্ন উৎপাদিত ফল বিক্রির জন্য খাগড়াছড়ি শহরে যাই এবং বিকেলে বাড়ি ফিরে আসি। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল ভাল সড়ক যোগাযোগের জন্য।’
তিনি আরো বলেন, পাকা রাস্তার কারণে অনেক পরিবহন বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে তৈরি চান্দের গাড়ি (চার চাকার গাড়ি) চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কে চলাচল করে। এ এলাকার মানুষ এখন এসব যানবাহন ব্যবহার করে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি শহরে যাতায়াত করে।
৫ নং ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডে দুইবার নির্বাচিত কাউন্সিলর কংগু মারমা বলেন, ২০০৭ সালের আগে শহরে বা অন্য কোথায়ও যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটা সম্ভব হচ্ছে।
পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এখন অনেক কিছুই ঠিক। আমরা এখন পাকা রাস্তা, নতুন স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক পেয়েছি এবং নিরাপদ পানি, বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল এবং স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করছি।’
১৬৭ লুসিয়া মৌজার হেডম্যান লাল থানগা লুসাই, যিনি রাঙ্গামাটির কাছে সাজেক ট্যুরিজম স্পটে রিসোর্ট ব্যবসা করেন, তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলের জেলাগুলো আর পিছিয়ে নেই। উন্নত সড়ক যোগাযোগ মানুষের জীবনকে এখন অনেক সহজ করেছে।’
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পর এ অঞ্চলে প্রায় ১০৮ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে এখানে মোট ৩১ টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে আগে মাত্র দু’টি সেতু ছিল।’
পার্বত্য জেলাসমূহে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেইলি সেতু প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়ি এলাকায় ৪৩ টি বেইলি সেতু প্রতিস্থাপন করে স্থায়ী সেতুতে রূপান্তরের কাজ চলছে।’
বাসসের সঙ্গে আলাপকালে খাগড়াছড়ি-২৯৮ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য খুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন,‘বর্তমান সরকারের আমলে অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চলের মত খাগড়াছড়ির জনগণেরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও সময়োপযোগী অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে।’
সংসদ সদস্য বলেন, সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পূর্বে যে অবস্থা ছিল তার সাথে বর্তমান অবস্থার অনেক ব্যবধান রয়েছে। তিনি বলেন, আগে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যেতে যেখানে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগতো, সেখানে এখন হাটহাজারী-নাজিরহাট দিয়ে নতুন সড়ক হওয়ায় এই দুই জেলা সদরে যাতায়াতে মাত্র আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।
বাসস/এসআইআর/অনুবাদ-শহক/২০৪০/কেএমকে