কেরানীগঞ্জে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে

323

কেরানীগঞ্জ, ১১ মে, ২০১৮ (বাসস) : রমজানের ঈদকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস পল্লীর কারখানাগুলোর কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছে। কারও যেন একটু দম ফেলার ফুসরত নেই। এসব কারখানায় মেয়েদের থ্রি-পিস, ছেলেদের প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট থেকে শুরু করে ছোটদের পোশাক সবকিছুই তৈরি হচ্ছে ।
কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর ও কালিগঞ্জের পোশাক পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার ৯১ নুর সুপার মার্কেটের ৭ম তলায় একটি গার্মেন্টন্সে প্রায় অর্ধশত কারিগর জিন্সের প্যান্ট তৈরি করছে। কারখানার এক পাশে চলছে কাপড় কাটার কাজ। আর অন্য পাশে কারিগররা সেলাইয়ের কাজ করছে। কারখানার মালিক মো. সেলিম খান জানান,ঈদকে ঘিরে দিনরাত কাজ হচ্ছে তাদের কারখানায়।
নূর সুপার মার্কেটের ফ্যান্ট হাউজের মালিক মো. আবু সাঈদ জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরী পোশাকের মার্কেট এটি। গত রোজার ও কোরবানীর ঈদেও তাদের ব্যবসা মোটামুটি ভালো হয়েছে। এবছরের পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ক্রেতা সাধারণরা ভিড়তে শুরু করেছে আমাদের এই পোশাকের পাইকারী বাজারে। তিনি আরো জানান , বিগত বছরগুলোতে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে তাদেরকে অনেক সমস্যায় পড়তে হত। কিন্তু কেরাণীগঞ্জে এখন আর কোন বিদ্যতের সমস্যা নেই। যে কারণে তাদের উৎপাদন এবছর আগের তুলনায় অনেকটাই বেশী।
জেলা পরিষদ মার্কেটের খান গার্মেন্টেসে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট একটি ঘরে ১৫ জন কারিগর জিন্স প্যান্ট তৈরির কাজ করছে। কারখানার মালিক মো. উবায়দুল ইসলাম রাজু শ্রমিকদের নিয়ে তৈরি হওয়া প্যান্ট নিজ দোকানসহ বিভিন্ন পাইকারি দোকানে সরবরাহ করতে প্যাকিং করে থরে থরে সাজিয়ে রাখছেন। তিনি জানান, গতবার রমজানের ঈদকে ঘিরে ৪৫ হাজার প্যান্ট তৈরি করেছিলেন। এবার ৫০ হাজার প্যান্ট তৈরি করবেন। তাই কারখানায় কাজের ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে।
আশা কমপ্লেক্সের মোবারক হোসেন জানান,এবার ঈদকে ঘিরে মেয়েদের ৩০ হাজার থ্রি-পিস তৈরি করবেন তারা। আর এতে বাজেট রেখেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা। তিনি আরও জানান, ঈদে দেশি কাপড়ের তৈরি পণ্যের বিক্রি কিছুটা কম হয়। তাই পুরান ঢাকার ইসলামপুর থেকে ইন্ডিয়ান ও চায়নার কাপড় কিনে আনেন। পরে এগুলো ভারতীয় পোশাকের ডিজাইনে থ্রি-পিস তৈরি করে বিক্রি করেন।
আলম সুপার মার্কেটের গ্রুভী পাঞ্জাবীর মালিক মো. জহির উদ্দিন জানান, অত্র এলাকায় তাদের তিনটি শোরুম রয়েছে। ৬৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা মূল্যের পাঞ্জাবী রয়েছে তাদের শোরুমে। যা রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে অনেক বেশী দামে বিক্রি হয়ে থাকে। তিনি বলেন রং আর ডিজাইনের দিকে খেয়াল রেখে আমরা একটু ভিন্ন স্টাইলের পাঞ্জাবী বাজারজাত করে থাকি। ঠিক একই ধরনের মন্তব্য ওই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী জিলাস গার্মেন্টেসের মালিক হাজী মো. নাজিম উদ্দিনের। তার মতে আমরা বর্তমান সময়ের সাথে মানুষের রুচিকে প্রাধান্য দিয়ে পোশাক তৈরী করে থাকি। এ মৌসুমে তাদের বিক্রির টার্গেট প্রায় ২ কোটি টাকা।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম নূরু জানান, বছরের প্রতিদিন কেরানীগঞ্জের পোশাক কারখানাগুলো সচল থাকে। তবে ঈদকে ঘিরে কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লীর কারখানাগুলোর ব্যস্ততা বহু গুণ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, দেশে এখনও স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। তাদের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখেই কেরানীগঞ্জের কারখানাগুলোতে পোশাক তৈরি হয়।
কেরানীগঞ্জ বস্ত্র ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আ.আজীজ জানান, দেশের ঈদের পোশাকের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পোশাক কেরানীগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না।