ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে আরপিও সংশোধনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা

632

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : মন্ত্রিসভা আজ ‘জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২’ সংশোধন করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সোমবার মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে ‘ইভিএম’ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত এ সংশোধনীর অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন এখন পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে।’
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে খসড়া ‘জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধনী) আইন ২০১৮’ কার্যকর হবে।
মো. শফিউল আলম বলেন, সংশোধিত আইনে নির্বাচন কমিশনের বিধান অনুসারে প্রার্থীরা যে কোন নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমাদানের সুযোগ পাবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইন অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমাদানের পূর্বে ঋণ খেলাপিরা তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। আগে তাদের মনোনয়নপত্র জমাদানের সাতদিন পূর্বে ঋণ পুনঃতফসিল করতে হতো।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইন ইভিএম সম্পর্কিত জল্পনা-কল্পনা নাকচ এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সফ্টওয়্যার উন্নয়নে নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করেছে।
তিনি বলেন, ‘ইভিএম মেশিন নিজেই কাজ করবে, যা কোন নেটওয়ার্কের আওতায় নয়। এটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত নয় কিংবা ইন্টারনেট বা কোন নেটওয়ার্কের সঙ্গে এর সংযোগ নেই। ফলে এই মেশিন হ্যাক্ড হবে না।’
তিনি বলেন, সেই সঙ্গে কোন কারচুপি বা কোন অসৎ উদ্দেশ্যে যাতে এই মেশিন ব্যবহার করা না হয় সেই জন্য এই মেশিন ইলেকট্রনিক নিরাপত্তায় রাখা হবে। আলম বলেন, ইভিএম-এর কোন বেতার তরঙ্গ, রিসিভার বা ডাটা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে না। নির্বাচন কমিশন নিয়োগকৃত প্রকৌশলী দল দ্বারা উদ্ভাবিত কেবলমাত্র বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট ও পরিবর্তনশীল ডাটাই মেশিন গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, ‘ভোটদানের সময় কোন ভোটার যাতে বঞ্চিত বা কোনরকম প্রতারণার মধ্যে না পড়েন সে জন্য এই মেশিনে নিরাপত্তার সার্বিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৬৪টি দুর্লভ ছবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশীপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বর্ণপদক ও রৌপ্যপদক হস্তান্তর করেন, যা তারা গত ২৪ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘পার্টনারশীপ বুলেটিন অ্যান্ড নিউজপেপার’ কর্তৃক অর্জন করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পিপিপি কর্তৃপক্ষ ‘গভর্নমেন্ট পিপি প্রমোটার অব দ্য ইয়ার’ ক্যাটাগরি থেকে স্বর্ণপদক ও ‘বেস্ট সোশ্যাল ইনফ্রাসট্রাক্চার প্রজেক্ট ’ ক্যাটাগরি থেকে রৌপ্যপদক লাভ করে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী এবং সচিবও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইসিও প্রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন, যা বাংলাদেশের বিমান বন্দরসমূহের নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএবি) ইন্টারন্যাশনাল সিবিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) থেকে লাভ করে।
পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়নের ওপর জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৮ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ে মন্ত্রিপরিষদের ১০টি সভায় ৮৩টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যার এ পর্যন্ত ৬০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে সরকার বিদেশের সঙ্গে তিনটি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে এবং সংসদে ২৯টি আইন পাস হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় আজকের বৈঠকে প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল সোস্যাল ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল অ্যাক্ট-২০১৮’সহ আরো তিনটি আইন ও দু’টি নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
অপর দুটি হলোÑ ‘ব্রিক ম্যানুফেকচারিং অ্যান্ড ব্রিক ক্লিন সেটআপ (কন্ট্রোল) অ্যাক্ট-২০১৮’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড এরোস্পেস ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-২০১৮’।
মন্ত্রিসভা অনুমোদিত নীতিমালা দুটি হলোÑ ‘ন্যাশনাল আইসিটি পলিসি-২০১৮’ এবং ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স পলিসি-২০১৮’।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ইটের ভাটা সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইনে পরিবেশ বান্ধব হলো ব্রিক ও ব্লক তৈরির জন্য প্রণোদনা এবং লাইসেন্স ব্যতীত ব্রিক ক্লিনের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু ব্লক তৈরির জন্য কোন লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজন হবে না।
এ আইনে লাইসেন্সের কোন শর্ত লংঘন অথবা আশপাশের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির দায়ে জেলা প্রশাসকদের ইটভাটার লাইসেন্স বাতিল অথবা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন ভঙ্গের দায়ে কোন ব্যক্তি এক বছরের কারাদন্ড অথবা ৫ লাখ টাকা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
দেশে অ্যারোনটিক্যাল এবং এরোস্পেস বিষয়ক শিক্ষায় উৎসাহ ও মান উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-২০১৮’ অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রস্তাবিত আইনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি, ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর স্কুল, ফ্লাইং সেফটি ইনস্টিটিউট, কমান্ড এন্ড স্টাফ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, এরোনটিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং অফিসার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।
শফিউল আলম বলেন, ‘এটি হবে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদ্যমান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিধিবিধান অনুযায়ী তা পরিচালিত হবে এবং রাষ্ট্রপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর।’
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল অথবা তদূর্ধ্ব পদের একজন কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শর্তাবলী সাপেক্ষে চারবছরের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হবেন।