বিনিয়োগ বাড়াতে অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরী

486

ঢাকা, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। যা বৈশ্বিক পরিমন্ডলে প্রশংসিত হচ্ছে। তবে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নয়ন পেতে বৈদেশিক এবং স্থানীয় উভয় পর্যায়ে বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়াতে হবে। এর জন্য যোগাযোগ অবকাঠামো, বন্দর, জ্বালানী নিরাপত্তা এবং কর সহজীকরণসহ বিনিয়োগবান্ধব নীতিতে সংস্কার আনতে হবে।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলানগর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘গেটওয়ে টু গ্রোথ এন্ড ইনভেস্টমেন্ট’ বিষয়ক কর্মঅধিবেশনে বক্তারা এমন অভিমত তুলে ধরেন।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসিবি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপক ড. এম মাসরুর রিয়াজ, ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির, জাপান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা জেট্রোর আবাসিক কার্যালয়ের প্রতিনিধি তাইকি কোগা আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড মালয়েশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবরার এ. আনোয়ার।
মো. নজিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন,বেসরকারিখাতকে সরকার অর্থনীতি বা প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন বলে বিবেচনা করে। সেজন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বা শিল্পায়নকে ফ্যাসিলিয়েট করা হচ্ছে। তবে তিনি বিনিয়োগ প্রবাহ তরান্বিত করতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন,দেশে এখন যোগ্য ও দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব রয়েছে।ভিশনারি এই নেতৃত্ব বা সরকার ব্যবসায়ীদের যে কোন ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতির কারণে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ভিত্তিতে অনেক কিছু হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত চমৎকার ও সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম বলেন,বাংলাদেশকে আঞ্চলিক বিনিয়োগ প্রবেশদ্বার হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বাড়াতে হবে।দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হবে।
অনুষ্ঠানে এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বিনিয়োগ প্রবেশদ্বার হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্চ রয়েছে। যেমন-যোগাযোগ অবকাঠামোর অপর্যাপ্ততা, জ্বালানি নিরাপত্তা,বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী থাকার পরও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব, উচ্চ করহার এব কর জটিলতা, ডয়িং বিজনেস পরিস্থিতি এবং বিমানবন্দরে সন্তোষজনক পর্যায়ে সেবা না পাওয়া। এসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রবাহের আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আইএফসির অর্থনীতিবিদ মাসরুর রিয়াজ গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামিজক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ৬ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা। শ্রম খরচ কম এবং ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্টের কারণে ম্যানুফেকচারিং সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ আঞ্চলিক বিনিয়োগ হাব হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে তিনি মনে করনে।
আবরার এ. আনোয়ার তার মূল প্রবন্ধে বিনিয়োগ প্রবাহ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য ও শিল্পায়ন সংশ্লিষ্ট আইন আরো সহজ করার পরামর্শ দেন।