বাউল গানে দর্শকদের মুগ্ধ করলেন পার্বতী বাউল

403

ঢাকা, ২৮ অক্টোবর ২০১৮ (বাসস) : বাউল গান গেয়ে আসর মাতিয়ে তোললেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী পার্বতী বাউল। দুই ঘন্টার পরিবেশনায় শিল্পী নানা ঘরানার গানে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এই শিল্পী গতরাতে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এই পরিবেশনায় অংশ নেন। রাত সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত শিল্পী একটানা বাউল সংগীত পরিবেশন করেন। এই পরিবেশনার শিরোনাম ছিলো ‘কীরূপ দেখি নয়ন মুদি।’
বাউল গানের ভিন্নধর্মী এই শিল্পী অনুষ্ঠান শুরুর আগে দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, বাউলদের মূলমন্ত্র হচ্ছে মানুষ। বাউলরা মরমী গানের ভেতর দিয়ে সন্ধান করেন স্বাধীন সত্ত্বা। সে সত্ত্বা হচ্ছে মানুষেরই অন্তর। মানুষেরই জীবনধারা। মানুষের অন্তরশক্তিই বাউল গান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বাউলদের দেশ। তা লক্ষ্য করা যায়, কুষ্টিয়ায় লালনের উৎসবে গেলে। এই উৎসবে আমি অংশ নিয়েছি। ভারত, নেপাল থেকে এই উৎসবে খ্যাতিমান বাউলরা যোগ দিয়ে শাইজির স্পর্শ গ্রহণ করেন।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী শিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বলেন, পার্বতী বাউল আমাদের দেশেরই শিল্পী। তার জন্ম চট্টগ্রামের রাউজান থানায়। ছোটকালে পরিবারের সাথে কলকাতায় চলে যান। তিনি বাউল সংগীতের মধ্যদিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির এই গানকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে খ্যাতিলাভ করেছেন। তিনি শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিজুয়াল আর্ট’এ শিক্ষা গ্রহণ করেন। গানের শিক্ষা নেন হিন্দুস্থান ক্লাসিক মিউজিক থেকে এবং নাচের শিক্ষা নেন শ্রীলেখা মুখার্জী থেকে।
তিনি বলেন, শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব একটি বাউল গানের দল রয়েছে। তারা সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় বাউল গান পরিবেশন করে দেশবাসীর মন জয় করেছেন। এই শিল্পীদের জন্য তিনদিনের একটি কর্মশালা পরিচালনা করবেন পার্বতী বাউল। এতে অন্যান্য বাউলরা ও অংশ নেবেন। এতে আমাদের বাউল শিল্পীরা বিশেষভাবে অনেক কিছু জানতে পারবেন আশা করছি।
বাংলাদেশের সংগীত সাধক পাঞ্জু শাহ-এর লেখা বাউল গান ‘দয়াল দরদী শাই কাঙ্গাল এলো দ্বারে’ দিয়ে তিনি পরিবেশনা শুরু করেন। এর পর তার গাওয়া দশটি জনপ্রিয় বাউল গান গেয়ে শোনান। অন্য গানগুলো হচ্ছেÑ যেজন পথ হেরে, মায়া চুম্বক কলটি পাতা আছে ভাই, আমি মরছি সেই ভশে, হাওয়ার ভশে চলছে মানুষ, চর্যাগীতির গান ‘পূর্ণ সম্পূর্ণা’, যার মন ভাল না সে পীরিতের মর্ম কি জানে, কিছু দিন মনে মনে ঘরের কোনে, শাহ আবদুল করিমের গান ‘কেন পিরিতি শিখাইলারে বন্ধু ছাইরা যাইবা যদি ও নিগুঢ প্রেম কথাটি আমি শুধাই কার কাছে।
প্রায় দুই ঘন্টায় শিল্পী দশটি গান পরিবেশন এবং প্রতিটি গান গাওয়ার পর-গানের ওপর বিষয় নিয়ে কথামালা এবং দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। দর্শকের পছন্দের তিনটি গান পরিবেশন করেন।
পাবর্তী বাউলের পরিবেশনায় রয়েছে স্বাতন্ত্য উপস্থাপনা । গানের সাথে বাউল ঢঙ্গে তার নৃত্য, পায়ের পাতা পর্যন্ত তার জটা চুলের দুলনী, একতারার যাদুকরী বাদন ও পায়ে গুঙুরের তাল মিলিয়ে এক বিস্ময়কর পরিবেশনা উপভোগ করেন শ্রোতা-দর্শকরা। গানের সঙ্গে তার অভিনব জটা চুল যখন সুরের পরতে পরতে চারদিকে দুলে উঠছিল, দর্শকরা বার বার হাততালি দিয়ে শিল্পীকে অভিবাদন জানান।