বাসস দেশ-৩৬ : বাংলাদেশ-ভারত অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় যোগাযোগ চুক্তি স্বাক্ষরিত

330

বাসস দেশ-৩৬
বাংলাদেশ-ভারত-যোগাযোগ
বাংলাদেশ-ভারত অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় যোগাযোগ চুক্তি স্বাক্ষরিত
নয়াদিল্লী, ২৫ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও জাহাজ চলাচল এর লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌ যোগাযোগ বাড়াতে আজ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লী নৌ সচিব পর্যায়ে বৈঠক শেষে চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়।
ভারতের নৌ সচিব গোপাল কৃষ্ণ ও বাংলাদেশের নৌ সচিব আব্দুস সামাদ ভারত থেকে ও ভারতে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিগুলোতে স্বাক্ষর করেন।
এছাড়া ভারতের ধুবরি ও বাংলাদেশের পানগাঁও বন্দরকে নতুন পোর্টস অব কল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এন্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি)’তে একটি সংযোজনীও স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের নৌ সচিব আব্দুস সামাদ চুক্তি স্বাক্ষর শেষে এখানে হোটেল লা মেরিডিয়ানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বৈঠকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বাড়াতে অনেক বিষয় আলোচিত হয়েছে। আর আমরা কয়েকটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছি, যা দুই দেশের জনগণের জন্য লাভজনক হবে।
ভারতের নৌ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের নাকুগাও স্থলবন্দর ও ভারতের ডালু আইসিপিকে সচল করতে এবং ভুটানের গেলেফুকে ত্রিপক্ষীয় আন্তঃসীমান্ত রুট হিসেবে যুক্ত করার জন্যেও আলোচনা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রটোকল রুটসমূহ ও উপকূলীয় নৌ রুটগুলোতে তৃতীয় দেশের কার্গো চলাচলের অনুমতির বিষয়টিও আলোচিত হয়।
ভারতের নৌ সচিব বলেন, উপকূলীয় নৌ চুক্তির আওতায় ধামড়া, ভি.ও. চিদামবারানার বন্দর ও কামারাঝার বন্দর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ও বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। ‘আগামী ডিসেম্বর ২০১৮ তে অনুষ্ঠেয় যৌথ নৌ কমিটি বৈঠকে এ নিয়ে আরো আলোচনা হবে।’
একদিন আগে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধির দলের মধ্যে ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এন্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি)’র আওতায় স্ট্যান্ডিং কমিটি ১৯তম বৈঠকের পর নৌ সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
দিনব্যাপী এই বৈঠকে ভারতের নৌ, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অব ইন্ডিয়া (আইডব্লিউএআই)-এর প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বাংলাদেশের নৌ মন্ত্রণালয়, রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র কর্মকর্তারা যোগ দেন।
বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এন্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি)’ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া উভয়পক্ষ ভারতের রূপনারায়ণ নদীর গিয়নখালী থেকে কোলাঘাট পর্যন্ত প্রটোকল রুটে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচনা এবং ভারতে কোলাঘাট ও বাংলাদেশে চিলমারীকে নতুন পোর্ট অব কল ঘোষণা করতে সম্মত হয়।
গোপাল কৃষ্ণ বলেন, ‘নতুন ব্যবস্থা রূপনারায়ণ নদী দিয়ে আইডব্লিউটির মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফ্লাইঅ্যাশ, সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন সহজ হবে।
বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উভয়পক্ষ আসামের করিমগঞ্জে বারাক নদীর বদরপুর ও বাংলাদেশের আশুগঞ্জের ঘোড়াশালকে সম্প্রসারিত পোর্ট অব কল ঘোষণা করতেও সম্মত হয়েছে।
ভারতীয় পক্ষ কলকাতা থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত প্রটোকল রুটের সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছে।
সরকারি একাধিক সূত্র অনুযায়ী নৌপথে অভ্যন্তরীণ নৌপথে বর্তমানে যে ৩.৫ এমএমটি কার্গো চলাচল করছে অতিরিক্ত পোর্টস অব কল ও প্রটোকল রুটের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তের পর পরই তা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর ফলে নৌপথে ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া এবং বাংলাদেশের মংলা বন্দরের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে একদিকে যেমন এক্সিম কার্গোর চলাচলে সুযোগ সৃষ্টি হবে তেমনি আনুসঙ্গিক খরচও হ্রাস পাবে।
দু’টি দেশের মধ্যে অপর যে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা হয়েছে তা হলো অভ্যন্তরীণ প্রটোকল রুট ও কোস্টাল শিপিং রুটে যাত্রী ও ক্রুজ জাহাজ চলাচলের বিষয়ে স্টান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চূড়ান্ত করণ। কলকাতা-ঢাকা- গৌহাটি জোরহাট এর মধ্যে এই রিভার ক্রুজ সার্ভিস শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বৈঠকে এই বিষয়েও মতৈক্য হয়েছে যে, একটি যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি ঢাকা-রাজশাহী প্রটোকল রুট আরিচা নাগাদ সম্প্রসারণের বিষয়ে কারিগরি উপযোগিতা খতিয়ে দেখবে।
এতে এই সিদ্ধান্ত হয় যে, আশুগঞ্জ-জাকিগঞ্জ ও বাংলাদেশের সম্প্রসারিত ইন্দোবাংলা প্রটোকল রুট সিরাজগঞ্জ-দাইখোয়া-এর খনন কাজ তদারকি ও মনিটরিংয়ের জন্য ‘প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট’ ভারতের ৮০% আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকবে এবং বাকী ব্যয় বহন করবে বাংলাদেশ।
এই খনন কাজের সার্বিক মনিটরিংয়ের জন্য ইতোমধ্যে একটি যৌথ মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাসস/এআইএম/অনু-এইচএন-জেহক/২১৪৫/রশিদ/কেএমকে